বারকোড হচ্ছে মেশিনে তৈরি এক প্রকার সাংস্কৃতিক কোড। বারকোড কে সোর্সকোডও বলা হয়ে থাকে। বার কোডের জনক হল বিজ্ঞানী মোর্স। বড় বড় শপিং মলে শপিং করতে গেলে দেখবেন জিনিসের সাথে লাগানো ছোট কাগজ যেখানে দাম লেখা আছে তার একটু উপরেই কালো কালো কিছু দাগ দেওয়া থাকে।
আর এটাই হচ্ছে বারকোড। একটি ছোট যন্ত্র কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট করা থাকে। যার মধ্য থেকে লাল আলো বের হয়। সেই আলোকে কালো কালো দাগ গুলোর উপরে ধরলেই কম্পিউটারে জিনিসটির নাম এবং মূল্য চলে আসে।
বারকোড |
মূল কথা হল যাতে বড় কোন হিসাব করতে ভুল না হয়। সেজন্য বারকোড ব্যবহার করা হয়। এটি যন্ত্র ছাড়া পড়া প্রায় অসম্ভব। যন্ত্র দিয়ে পড়লেই সুন্দরভাবে বলে দেওয়া যায় বার কোডের মধ্যে কি কথা লুকানো আছে।
বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে যাদের মাধ্যমে বারকোড তৈরি করা যায় এবং পড়া যায়। প্রথম ব্যবসায়িক কাজে বারকোড ব্যবহার শুরু হয় ১৯৬০ সালের দিকে। নির্ভুলভাবে খুব দ্রুততার সাথে পণ্য চিহ্নিত করতে এবং তথ্য বা ডেটা সংরক্ষণ করতে বারকোড ব্যবহার করা হয়।
বারকোড রিডার কি?
বারকোড রিডার হচ্ছে কম্পিউটারের এমন একটি ইনপুট ডিভাইস। যা কোনও বস্তু আইটেম বা বইতে লেখা বারকোড স্ক্যান করে এবং সহজে পড়ে। ইহা এক ধরনের স্ক্যানার ডিভাইস।যা একটি বারকোডে একটি পণ্যের মূল্য, মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ, উৎপাদনের তারিখ, পণ্যের নম্বর ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য থাকে। বারকোডে কিছু পাতলা এবং অনেক ধরনের লাইন রয়েছে।
যার মধ্যে পণ্যের বিবরণ লুকানো থাকে। বারকোড রিডার এর সাহায্যে এটি স্ক্যান করা হলে, বারকোড রিডার কম্পিউটার স্ক্রিনে আউটপুট প্রদর্শন করে থাকে।
বারকোড কত প্রকার?
বারকোড দুই প্রকার যথাঃ- একমাত্রিক বা 1D বারকোড এবং
- দ্বিমাত্রিক বা 2D বারকোড
একমাত্রিক বা 1D বারকোড কি?
একমাত্রিক বা 1D বারকোড গুলো শুধুমাত্র স্পেস বা লাইন দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাক। এই কোড গুলোতে পণ্যের রং, পণ্যের ধরণ ও আকার সম্পর্কে ধারণা জমা থাকে।
তাছাড়া এধরনের কোড গুলো আমরা সাধারণত দেখে থাকি প্রোডাক্ট প্যাকেজিং কিংবা ইউনিভার্সাল প্রোডাক্ট কোডে। যার মাধ্যমে প্রোডাক্ট প্যাকেজিং সহজে ট্র্যাগ করা যায়।
এছাড়াও বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি গুলো এই ধরনের বারকোড গুলো ব্যবহার করে থাকে। একমাত্রিক কিংবা 1D বারকোড গুলো যে সকল পণ্য গুলোর গায়ে দেখা যায়, সেগুলো হল যেমনঃ তেল, ক্রিম, কলম ইত্যাদি।
দ্বিমাত্রিক বা 2D বারকোড কি?
দ্বিমাত্রিক বা 2D বারকোড গুলো একমাত্রিক বারকোড থেকে একটু বেশি জটিল হয়ে থাকে। এই কোড গুলোতে পণ্যের ছবি, মূল্য সহ আরও বিভিন্ন তথ্য জমা থাকে। আর এই ধরনের বারকোড গুলোকে QR কোড বা কুইক রেসপন্স কোড নামে পরিচিত।
বারকোডের ইতিহাস?
নরম্যান জোসেফ উডল্যান্ড এবং বার্নার্ড সিলভার নামে দুই ব্যক্তি দ্বারা আধুনিক বারকোডটি তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৫৯ এর দশকে ডেভিড কলিন্স একটি পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন।যেখানে বারকোডগুলো প্রথমবারের মতো রেলপথের ট্রেনগুলোকে ট্র্যাক করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে ১৯৬৯ সালে বারকোডগুলোর বিকাশের জন্য অনেক কাজ করা হয়েছিল।
এরপর ১৯৭৪ সালে ওহিওর ট্রয় মার্শে একটি সুপারমার্কেটে প্রথম UPC স্ক্যানার ইনস্টল করা হয়েছিল। Wrigley এর পণ্য প্যাকেটে প্রথমবারের মতো BC ইনস্টল করা হয়েছিল৷
বারকোড কিভাবে তৈরি করে?
কিউআর কোড তৈরি করার করার মতো বারকোড তৈরি করা অনেক সহজ। বর্তমানে মার্কেটপ্লেসে অনেক ধরনের কোম্পানি রয়েছে যারা বারকোড তৈরি করে থাকে।
আর অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের বারকোড জেনারেটর সিস্টেম রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে ফ্রিতে বারকোড তৈরি করা যায়। এই বারকোড জেনারেটর গুলো ব্যবহার করে আপনারা খুব সহজে বার কোড তৈরি করে নিতে পারেন।
তাছাড়া বারকোড জেনারেটর এর জন্য বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট আছে সেখান থেকে বারকোড তৈরি করে নিতে পারেন। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফ্রিতে বারকোড বানানোর জন্য এই http://www.barcode-generator.org/ যান এবং ফ্রিতে বারকোড তৈরি করুন।
তাছাড়া এই ওয়েবসাইট থেকে URL, VCard, App store, Images, Multi URL, Text, E-mail, SMS, Facebook, PDF, MP3 ইত্যাদি উপায় গুলো ব্যবহার করে বারকোড তৈরি করতে পারেন।
যে বারকোডটি তৈরি করতে চান সে বিষয়ে সকল তথ্য দিয়ে নিচে থাকা Create QR Code অপশনে ক্লিক করলে বারকোড তৈরি হয়ে যাবে।
এবার ডান পাশে JPG, EPS, SVG অপশন গুলো থেকে যে ফাইল আপনি নিতে চান। সেটা সিলেক্ট করে নিচে থাকা Download অপশনে ক্লিক করলে বারকোডটি ডাউনলোড হয়ে যাবে।
বারকোড কিভাবে কাজ করে?
একটি বারকোডের মধ্যে সর্বমোট ৯৫ টি ব্লক থাকে। আর ৯৫ টি ব্লককে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। এই তিনটি ব্লক হল লেফট গার্ড, সেন্টার গার্ড এবং রাইট গার্ড। এদের মধ্যে মোট ১২টি ব্লকে বারকোড লেখা হয়।তথ্যগুলো বারকোডের প্রতিটি সাদাকালো বার এবং এদের মধ্যকার ফাঁকা জায়গার মধ্যে এনকোড করে রাখা হয়। বারকোড রিডার নামক একটি স্ক্যানার ডিভাইস এর সাহায্যে কোডগুলোকে ডিকোড করা হয়।
যা লেজার ব্যবহার করে কাজ করে। তাছাড়া রিডারটি রিড করার সময় বাম দিক থেকে ডানদিকে রিড করে থাকে। বার প্যাটার্নের মধ্যে বাইনারি বিট স্টোর করা থাকে। এবং সেই বিটগুলো কিছু অক্ষরকে নির্দেশ করে।
স্কান্যার ডিভাইস বাইনারি সিকোয়েন্সটি কম্পিউটারে পাঠানোর পরে কম্পিউটার সেগুলোকে আমাদের বোধগম্য ভাষায় সহজে রূপান্তর করে প্রদর্শন করে। বারকোড জেনারেটর সফটওয়্যার দিয়ে বারকোড তৈরি করা হয়ে থাকে।
সফটওয়্যারটি প্রথমে স্ট্রিং হিসেবে তথ্য বা উপাত্ত ইনপুট নেয়। এরপরে সেগুলোকে বাইনারিতে কনভার্ট করে। এবং বারকোডের এলগোরিদমের সাহায্যে বারগুলো জেনারেট করে আউটপুট দিয়ে দেয়।
একটি একমাত্রিক বারকোড প্রায় ২০টি ক্যারেক্টার ধারণ করে রাখতে পারে। এবং একটি দ্বিমাত্রিক বারকোড প্রায় ২০০০টি ক্যারেক্টার ধারণ করতে পারে। দ্বিমাত্রিক বারকোডের কারেকশন থাকে ফলে এর কিছু অংশ নষ্ট হয়ে গেলেও স্ক্যানার তা স্ক্যান করতে পারে।
বারকোডের নিচে যে ডিজিটগুলো দেখা যায় সেগুলোকে EAN-13 বলা হয়ে থাকে। UPC-A এর ১২টি ডিজিটের পুর্বে একটি ডিজিট বসে EAN-13 কোড তৈরি করে।
তাছাড়া আন্তর্জাতিক কোন পণ্যের জন্য বারকোড ব্যবহার করতে হলে GS1 নামক একটি অর্গানাইজেশন থেকে বারকোড ক্রয় করে নিতে হয়। তারাই মূলত ইউনিক বারকোড জেনারেট করে দেয়।
যার কারণে সেই পণ্যটি যেকোন দেশের স্ক্যানার সহজে পড়তে পারে। বারকোডের প্রথম বিটটি কোম্পানিকে নির্দেশ করে এবং প্রথম ৩টি ডিজিট সেই দেশকে নির্দেশ করে যে দেশে কোম্পানিটি অবস্থিত রয়েছে।
১২তম ডিজিটটি স্ক্যানার ঠিকভাবে সম্পূর্ণ কোডটি পড়তে পারছে কি না তা যাচাই করার জন্য দেয়া হয়। একে চেক ডিজিট বলা হয়। কোম্পানি প্রিফিক্স এবং ১২তম ডিজিটের মধ্যের ডিজিটগুলো নির্ধারনের জন্য কোন নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে না।
এগুলো পণ্যের কোম্পানি গুলো নিজেদের ইচ্ছা মত নির্ধারণ করতে পারে। তাছাড়া একটি সেন্ট্রাল ডেটাবেইজ থাকে। যার কারণে পৃথিবীর যেকোনো জায়গার স্ক্যানার পণ্যটি সহজে সনাক্ত করতে পারে।
বারকোড স্ক্যানিং এর জন্য দুইধরনের স্ক্যানিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একটি হল লেজার টাইপ বারকোড স্ক্যানার। অপরটি হল ইমেজ টাইপ বারকোড স্ক্যানার। লেজার টাইপ স্ক্যানার বারকোডের উপরে লেজারকে প্রজেক্ট করে থাকে।
এবং এর রিসিভার প্রতিফলিত আলো শনাক্ত করে প্রসেস করে। এরপর বারকোডের কালো বার গুলো আলো শোষণ করে। আর সাদা বার গুলো আলো প্রতিফলিত করে।
এভাবেই লেজার বারকোড স্ক্যানার সহজে কাজ করে। আর আমরা ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে যখন কোন বারকোডগুলো স্ক্যান করি। তখন আসলে ক্যামেরা পুরো বারকোডের একটি ছবি তোলে।
এরপর ছবিটি কিছু ইমেজ প্রসেসিং এলগোরিদমের সাহায্য ডিকোড করে আউটপুট দেয়। আর এই কাজটি ডিভাইসের মধ্যে থাকা প্রসেসর করতে পারে।
বার কোড কেন ব্যবহার করা হয়?
ক্রেতাদের কাছে বিভিন্ন তথ্য পৌছে দেওয়ার জন্য বার কোড ব্যবহার করা হয়। কোন ব্যক্তি যদি তার কেনা পণ্যের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য যেমনঃ উৎপাদন তারিখ, দাম, সংখ্যা, মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ ইত্যাদি তথ্য বের করার জন্য বার কোড ব্যবহার করা হয়।বারকোড কোন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রযুক্তি?
বারকোড ব্যবসায় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত একটি প্রযুক্তি।