কম্পিউটার সিস্টেমে ব্যবহার করা প্রতিটি বর্ণ, সংখ্যা বা বিশেষ চিহ্নকে আলাদা আলাদাভাবে সিপিইউকে বুঝানোর জন্য বাইনারি বিট অর্থাৎ ০ বা ১ রূপান্তর করে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে অদ্বিতীয় সংকেত তৈরি করা হয়।
কম্পিউটার কোড |
আর এই অদ্বিতীয় সংকেতকে কম্পিউটার কোড বলে। ডেটা ইনপুটের জন্য কোডিং এর প্রয়োজন হয়। প্রসেসিং শেষে আবার আউটপুটকে ডিকোডিং করা হয়। আর এ পদ্ধতিতে কোডকে আবার বর্ণ, সংখ্যা বা চিহ্নে রূপান্তর করা হয়।
কম্পিউটার কোডিং কত প্রকার?
ব্যবহার ভিত্তিতে কম্পিউটার কোডকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয় যেমনঃ- অক্টাল কোড (Octal Code)
- হেক্সডেসিমেল কোড (Hexadecimal Code)
- বিসিডি কোড (BCD Code)
- আলফানিউমেরিক কোড (Alphanumeric Code)
- অ্যাসকি কোড (ASCII Code)
- ইবিসিডিআইসি কোড (EBCDIC Code)
- ইউনিককোড (Uni Code)
- গ্রে কোড (Gray Code)
- মোর্স কোড (Morse Code)
অক্টাল কোড কি?
অক্টাল কোড হল তিন বিটের বাইনারি কোড অর্থাৎ তিন বিট বিশিষ্ট বাইনারি কোডকে অক্টাল কোড বলা হয়। তিন বিটের অক্টাল কোডের সাহায্যে বড় ধরনের বাইনারি সংখ্যাকে সহজে সংক্ষিপ্ত সংকেত হিসেবে ব্যবহার করা যায়।ডিজিটাল কম্পিউটার এবং মাইক্রোপ্রসেসরের সাথে সংযোগের জন্য অক্টাল কোড ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ (৪৬)১০=(১০১১১০)২=(৫৬)৮=১০১১১০ (অক্টাল কোড)।
হেক্সডেসিমেল কোড কি?
হেক্সাডেসিমাল কোড হল চার বিটের বাইনারি কোড অর্থাৎ ৪ বিট বিশিষ্ট বাইনারি কোডকে হেক্সাডেসিমাল কোড বলা হয়। চার বিটের হেক্সাডেসিমাল কোডের সাহায্যে বড় ধরনের বাইনারি সংখ্যাকে সহজে সংক্ষিপ্ত সংকেত হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
তাছাড়া ডিজিটাল কম্পিউটার এবং মাইক্রোপ্রসেসরের সাথে সংযোগের জন্য হেক্সাডেসিমাল কোড ব্যবহার করা হয়। উদাহরণঃ (57)10=(111001)2=(39)16=00111001 (হেক্সাডেসিমাল কোড)।
বিসিডি কোড কি?
BCD শব্দটি পূর্ণরূপ হল (Binary Coded Decimal)। ইহা দশমিক পদ্ধতির সংখ্যাকে বাইনারি সংখ্যায় প্রকাশের জন্য ব্যবহার করা হয়। ০ থেকে ৯ এই দশটি অঙ্কের প্রত্যেকটিকে নির্দেশের জন্য ৪ বিট বাইনারি অঙ্কের প্রয়োজন হয়।
৪টি বিট দ্বারা 24=16 টি ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা নির্দেশ করা হয়। কম্পিউটারের এর তারিখ সংরক্ষণে, এর পুরনো সুপার কম্পিউটারে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ডে তারিখ সংরক্ষণে কোড ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও ডিজিটাল ঘড়ি, ডিজিটাল ভোল্টমিটার, ক্যালকুলেটর ও কম্পিউটারের BIOS এর তারিখ সংরক্ষণ ইত্যাদি কাজে বিসিডি কোড ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের বিসিডি কোড যেমনঃ
- বিসিডি ৮৪২১ কোড (সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কোড)
- বিসিডি ৫৪২১ কোড
- বিসিডি ৭৪২১ কোড
- বিসিডি ২৪২১ কোড ইত্যাদি।
আলফানিউমেরিক কোড কি?
যে কোড বর্ণ, অংক, গাণিতিক চিহ্ন (+,-,×,÷) এবং বিশেষ চিহ্নের (!,@,#,%,&,$,) জন্য ব্যবহার করা হয় তাকে আলফা নিউমেরিক কোড বলে। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় আলফা নিউমেরিক কোড উল্লেখ করা হলঃ
- ইবিসিডিআইসি কোড (EBCDIC Code)
- আসকি কোড (ASCII Code)
- ইউনিকোড (Unicode) ইত্যাদি।
ASCII Code-7 একটি আলফানিউমেরিক কোড। এ কোডের মাধ্যমে 27=128 টি চিহ্নকে কম্পিউটারে নির্দিষ্ট কোডভুক্ত করা যায়।
অ্যাসকি কোড কি?
আসকি কোড এর পূর্ণরুপ (American Standard Code for Information Interchange) মাইক্রোকম্পিউটারে এ কোডের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। এছাড়াও কম্পিউটার এবং ইনপুট/আউটপুট এর জন্য ব্যবহার যন্ত্র যেমন কীবোর্ড, মাউস, প্রিন্টার, মনিটর ইত্যাদির মধ্যে আলফানিউমেরিক তথ্য বা ডেটা আদান প্রদানের জন্য ব্যবহার করা হয়।
ASCII আধুনিক কম্পিউটারে বহুল ব্যবহার করা 7/8 বিটের আলফা নিউমেরিক কোড। সর্বপ্রথম ১৯৬৩ সালে ANSI(American National Standard Institute) কর্তৃক ASCII কোড উদ্ভাবিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে রবার্ট উইলিয়াম বিমার 7-বিটের ASCII কোডটি উদ্ভাবন করেন।
আসকি কোড কত প্রকার?
আসকি কোড ২ ধরনের যথাঃ
- ASCII-7
- ASCII-8
ASCII-7 কি?
এটি ৭বিটের কোড। বাম দিকের তিনটি বিটকে জোন বিট এবং ডান দিকের চারটি বিটকে সংখ্যাসূচক বিট বলে। ASCII-7 এর দ্বারা 27=128 টি অদ্বিতীয় চিহ্নকে কম্পিউটারে কোডভুক্ত করা যায়।
ASCII-8 কি?
আসকি ৭ এর বামে একটি প্যারিটি বিট যোগ করে ASCII-8 কোডটি তৈরি করা হয়। আর এ কোডটি ৮বিটের বিধায় 28=256টি অদ্বিতীয় চিহ্নকে কম্পিউটারে কোডভুক্ত করা যায়। বর্তামনে আসকি কোড বলতে আসকি কোড ৮ কেই বুঝায়।
ইবিসিডিআইসি কোড কি?
EBCDIC কোডের পূর্ণরূপ হচ্ছে (Extended Binary Coded Decimal Interchange Code)। ইহা একটি ৮ বিটের কোড। এই কোডটি BCD কোডের নতুন সংস্করণ। এই কোড দ্বারা ২৮ অর্থাৎ ২৫৬ টি অদ্বিতীয় অঙ্ক এবং চিহ্ন প্রকাশ করা যায়।
আর এ কোডে ০ থেকে ৯ সংখ্যার জন্য ১১১১, A থেকে Z বর্ণের জন্য ১১০০, ১১০১, ১১০০ এবং বিশেষ চিহ্নের জন্য ০১০০০, ০১০১, ০১১০ ও ০১১১ জোন বিট ব্যবহার করা হয়।
তাছাড়া দশমিক সংখ্যাগুলোকে ৮৪২১ কোডের মাধ্যমে প্রকাশ করে প্রত্যেক সংখ্যার সাথে ১১১১ জোন বিট যোগ করে কোড প্রকাশ করা হয়। যেমনঃ ৫ এর বিসিডি কোড ৮৪২১ এর পরের কোড মান হবে ০১০১। তাই ৫ এর কোড ১১১১০১০১ আর এখানে ১১১১ যোগ করে।
ইউনিককোড কি?
বিশ্বের সকল ভাষাকে কম্পিউটারে কোডভুক্ত করার জন্য বড় বড় কোম্পানিগুলো একটি মান তৈরি করেছে যাকে ইউনিকোড বলে। ইউনিকোড এর পূর্ণ অর্থ Universal Code বা সর্বজনীন কোড।বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত আসকি কোডের পাশাপাশি ইউনিকোড সিস্টেম চালু রয়েছে। ইউনিকোড হল ১৬ বিট কোড। যা বিভিন্ন ধরনের ক্যারেক্টার ও টেক্সটকে প্রকাশ করার জন্য ইউনিকোড ব্যবহার করা হয়।
ইউনিকোডের মাধ্যমে ২১৬ = ৬৫৫৩৬ টি অদ্বিতীয় চিহ্নকে নির্দিষ্ট করা যায়। পৃথিবীর সব ভাষাভাষীর জন্য তাদের ভাষায় কম্পিউটিং করা সহজ করার লক্ষ্যে ১৯৯১ সালে অ্যাপল কম্পিউটার কর্পোরেশন এবং Xerox Corporation এর একদল কম্পিউটার প্রকৌশলী পৃথিবীর সকল ভাষাভাষীর জন্য যৌথভাবে ইউনিকোড উদ্ভাবন করেন।
Unicode Consortium এর সদস্য হয়ে বাংলা ভাষাও ইউনিকোডভুক্ত করা হয়েছে। যেমনঃ
ভাষা - ইউনিকোড - মোট বর্ণ সংখ্যা
- Bengali - (0980 - u09FF) - 128
- Arabic - (0600 - OFF) - 256
- Basic Latin - (002 - 007F) - 96
ইউনিকোডের বৈশিষ্ট্য বা সুবিধা?
- ইহা হল ১৬ বিট বিশিষ্ট কোড। যার ফলে ৬৫,৫৩৬ টি অদ্বিতীয় চিহ্নকে নির্দিষ্ট করা যায়।
- এ কোডের দায়িত্বে ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম নামক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
- বিশ্বের ছোট বড় যেকোন ভাষাকে কম্পিউটারে কোডভুক্ত করা যায় ইউনিকোডের মাধ্যমে।
- ক্যারেক্টারকে কোড করার জন্য ১৬ বিটই ব্যবহার করা হয়।
- বিশ্বের শত শত ভাষায় হাজার হাজার বর্ণ ও চিহ্নের জন্য এ কোড ব্যবহার করা হয়।
- এ কোড থেকে অন্যান্য স্ট্যান্ডার্ড কোডে পরিবর্তন করা যায়। যেমনঃ – A= \u0041 ইত্যাদি।
গ্রে কোড কি?
গ্রে কোড হল এমন ধরনের কোড। যাতে একটি সংখ্যা হতে পরবর্তী সংখ্যায় যেতে মাত্র একটি বিটের পরিবর্তন ঘটে থাকে। গ্রে কোড কোন ওয়েটেড কোড নয়। তবে এটি বিশেষ ধরণের রিফ্লেকটেড কোড। রিফ্লেকটেড প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট বাইনারী কোডকে গ্রে কোড বলে।
এটি গাণিতিক অপারেশনের জন্য ব্যবহার করা তেমন সুধিাজনক নয়। কিন্তু এনালগ টু ডিজিটাল কনভার্টার সার্কিটে এবং ইনপুট আউটপুট ডিভাইসে ব্যবহার করা অনেক সুবিধাজনক।
মোর্স কোড কি?
মোর্স কোড কোন ভাষার বর্ণকে কোডে রুপান্তরের এক ধরনের বিশেষ পদ্ধতি। যা দিয়ে এক ধরনের ছন্দের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ করা যায়। স্যামুয়েল মোর্স বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ যোগাযোগের জন্য প্রথম এ কোডটি তৈরি করেন বলে, তার নামানুসারে এই কোডের নাম হয় মোর্স কোড।
তাছাড়া মোর্স কোড কোন উপাদানের "সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ" এ দুটি অবশ্যকীয় উপাদান নিয়ে গঠিত হয়। এক্ষেত্রে কোন উপাদানের "সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ" এ দুটি রূপের এক ধরনের পর্যায়ক্রম। যার মাধ্যমে কোন তথ্যের বর্ণ, সংখ্যা, যতি চিহ্ন ইত্যাদিকে উপস্থাপন করা যায়।
আর এতে এই "সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ" উপাদান হিসেবে শব্দ, চিহ্ন, স্পন্দন কিংবা কোন যন্ত্রের সুইচ অন বা অফ এবং সাধারণভাবে ব্যবহার করা "ডট (ডিট)" এবং "ড্যাশ (ডাহ্)" ইত্যাদি ছাড়াও আরও অসংখ্য জিনিস ব্যবহার করা যেতে পারে। মোর্স কোড হিসাব করা হয় ওয়ার্ড পার মিনিট হিসাবে।