দুই বা ততোধিক ডিভাইসের মধ্যে কোন ফিজিক্যাল কানেকশন কিংবা ক্যাবল সংযোগ ছাড়া ডেটা কমিউনিকেশনের পদ্ধতি হল ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম। এখন প্রায় সকলের বাড়িতে টেলিভিশন রয়েছে এবং এর সাথে ডিশ সংযোগ দেওয়া থাকে।
ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম |
আপনারা নিশ্চয়ই রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে পরিবর্তন করে থাকেন। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, রিমোট কন্ট্রোল কিভাবে কাজ করে? কিংবা ধরুন আপনার বন্ধুর মোবাইলে সেভ করা একটি গান আপনার অনেক ভাল লাগলো এবং সাথে সাথে আপনি গানটি আপনার মোবাইলে কপি করে নিলেন।
কিন্তু প্রশ্ন হল আপনি এ কাজটি কিভাবে করলেন? আপনি কি তার দিয়ে আপনার মোবাইলের সাথে আপনার বন্ধুর মোবাইল সংযুক্ত করেছিলেন? নিশ্চয়ই না। তাহলে প্রশ্ন হল কীভাবে কপি করা হল? আসলে উপরের বর্ণনাতে যে প্রযুক্তিটি কাজ করছে সেটি হল ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম।
অর্থাৎ একাধিক ডিভাইসের মধ্যে কোন তারের ভৌত সংযোগ ছাড়াই ডেটা ট্রান্সফার করার পদ্ধতি হল ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম।
ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম কাকে বলে?
তারবিহীন মাধ্যমের সাহায্যে ওয়্যারলেস ডিভাইসসমূহের মধ্যে যে পদ্ধতিতে ডেটার আদান প্রদান করা হয় তাকে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম বলে।ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম কত প্রকার?
ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনকে ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে কিংবা ডিভাইসসমূহের মধ্যে দূরত্বের ভিত্তিতে চার ভাগে ভাগ করা যায়ঃ- Wireless Personal Area Network (WPAN)
- Wireless Local Area Network (WLAN)
- Wireless Wide Area Network (WWAN)
- Wireless Metropolitan Area Network (WMAN)
ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন প্রযুক্তির উদাহরণ?
- কার্ডলেস টেলিফোন
- রেডিও কমিউনিকেশন সিস্টেম
- সেলুলার নেটওয়ার্ক
- শর্ট রেঞ্জ পয়েন্ট টু পয়েন্ট কমিউনিকেশন
- ওয়ারলেস মাইক্রোফোন
- কী-বোর্ড
- মাউস
- প্রিন্টার
- হেডফোন
- বিভিন্ন রিমোট কন্ট্রোল খেলনা
- ঘর বাড়িতে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক সিস্টেম
- ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক
- রোবট
- ব্লুটুথ
- ওয়াই-ফাই
- পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক
- ওয়্যারলেস ইউএসবি
- ওয়্যারলেস সেন্সর নেটওয়ার্ক ইত্যাদি।
ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা?
যেসকল স্থানে তার বা ক্যাবলভিত্তিক যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয় না। সেসকল স্থানে যোগাযোগের জন্য ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম একটি অপরিহার্য মাধ্যম।আবার প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে প্রাপ্ত সুবিধাসমূহ পাওয়ার জন্য বিশেষ করে সহজে বহনযোগ্য ডিভাইস যেমনঃ ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট কম্পিউটারের ক্ষেত্রে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন মাধ্যম ব্যবহার করা আবশ্যকীয়।
তাছাড়া প্রোডাক্টিভিটির কথা চিন্তা করলে তার সংযোগ, ব্যবহারকারীর জন্য একটি জটিল ও ঝামেলাযুক্ত পদ্ধতি। পক্ষান্তরে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর কমিউনিকেশন ডিভাইস যদি ওয়্যারলেস সাপোর্টেড হয়।
তবে এ সংক্রান্ত জটিলতা খুব কমই থাকে। ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমে কম দূরত্ব অথবা অধিক দূরত্বের স্থানসমূহের মধ্যে যোগাযোগ অথবা তথ্য স্থানান্তর করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে দূরত্ব অনুযায়ী ওয়্যারলেস মাধ্যম নির্বাচন করতে হবে। যেমনঃ
- নেটওয়ার্কের আওতায় যেকোন স্থানে ওয়্যারলেস ডিভাইস সহজে বহন করা যায়।
- নেটওয়ার্কের মধ্যে যেকোন স্থান থেকে বা ভ্রমণরত অবস্থায় ইন্টারনেট অ্যাকসেস করা যায়। পোর্টেবল বা অস্থায়ী ওয়ার্কস্টেশনের সাথে সংযুক্ত হওয়া যায়।
- ওয়্যারলেসযুক্ত ডিভাইসের তুলনামূলক কম।
- ওয়্যারলেসযুক্ত ডিভাইসের মতো সংযোগ সংখ্যা সীমিত নয় বিধায় অনেক ব্যবহারকারী শেয়ার করতে পারে।
- বিভিন্ন ধরনের জীবের দেহে সেন্সর অ্যান্টেনা সংযোগ করে জীবের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যায়।
- রেডিও ও টিভির ব্রডকাস্টিং এ ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়।
- ওয়্যার সংযোগের জন্য জটিলতা, স্থান পরিবর্তন ও অতিরিক্ত ব্যয় থেকে সহজে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
- গৃহসামগ্রীর দরজা, জানালা, লাইট, বিছানা, পর্দা, এসি ইত্যাদি কাজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- জিপিএস এর মাধ্যমে যেকোন স্থানে, এমনকি যানবাহনে ভ্রমণরত ব্যবহারকারীর অবস্থান জানা যায়।
- এর মাধ্যমে মোবাইল ফোন সহজে কমিউনিকেশন বাস্তবায়ন করা যায়।
ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম কিভাবে কাজ করে?
তারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সীমায় ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনের মাধ্যমে ডেটা আদান প্রদান করা সম্ভব। এছাড়াও রিমোট দিয়ে টিভি ভিসিডি কিংবা অত্যাধুনিক কোন খেলনাকে পরিচালনা করা হয়। বর্তমানে এমন অনেক ধরনের হেডফোন রয়েছে যেগুলো মোবাইলের সাথে সংযুক্ত না থেকেই মোবাইলের যেকোন সাউন্ডকে প্লে করতে সক্ষম।আর এসব ক্ষেত্রে সংযোগের জন্য তারের পরিবর্তে তারবিহীন মাধ্যম ব্যবহার করা হয়। তবে অনেক সময় দূরবর্তী ও দুর্গম স্থানে এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহে ডেটা ট্রান্সমিশনে তার মাধ্যম ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে তারবিহীন বা ওয়্যারলেস মাধ্যমে ডেটা আদান প্রদান করা হয়।
মোবাইল ডিভাইসের মধ্যে ডেটা কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে বেতার মাধ্যম সবচেয়ে বেশি উপযোগী। ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনের সাহায্যে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে অবস্থান করে একে অন্যের সাথে কথা বলা, টেক্সট মেসেজিং, চ্যাটিং ইত্যাদি কাজ কম খরচে খুব সহজে দ্রুত করা যার।
ওয়্যারলেস মাধ্যমে ডেটাকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ আকারে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের মধ্যে দিয়ে সঞ্চালন করা হয়। ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের ব্যাপ্তি কয়েক মিটার থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন বিভিন্ন ধরনের ফিক্সড, মোবাইল এবং পোর্টবল টু ওয়েভ রেডিও, পার্সোনাল ডিজিটাল অ্যাসিসটেন্টস (পিডিএ), সেলুলার টেলিফোনসমূহ এবং ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং ইত্যাদি নিয়ে থাকে।
ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন বাস্তবায়নে পয়েন্ট টু পয়েন্ট কমিউনিকেশন, ব্রডকাস্টিং, পয়েন্ট টু মাল্টি পয়েন্ট কমিউনিকেশন, সেলুলার নেটওয়ার্ক এবং অন্যান্য তারবিহীন নেটওয়ার্ক সম্পৃক্ত থাকে।
ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে কয় ধরনের অ্যাকসেস পয়েন্ট ব্যবহার করা হয়?
ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে দুই ধরনের অ্যাকসেস পয়েন্ট ব্যবহার করা হয়ঃ- মোবাইল নেটওয়ার্ক
- হটস্পট
মোবাইল নেটওয়ার্ক
আপনার মোবাইল ফোন দিয়ে যেসকল কাজ করেন যেমন ধরেন এসএমএস করা, কথা বলা, অনলাইন গেম খেলা, ওয়েবসাইট থেকে ডাউন করা ইত্যাদি কাজ মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সুসম্পন্ন হয়ে থাকে।হটস্পট
হটস্পট হল এক ধরনের ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যাকসেস পয়েন্ট। যা ল্যাপটব, কম্পিউটার, ট্যাব, নোটবুক, স্মার্টফোন, পিডিএ ইত্যাদিতে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে।ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের ব্যবহার?
ভ্রাম্যমান কিংবা চলমান ব্যক্তির ডেটা কমিউনিকেশনের প্রয়োজন হলে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করতে হয়। এছাড়াও সময়ের চাহিদা হিসেবে সকলেই এখন ইন্টারনেটের সাথে সার্বক্ষণিক সংযুক্ত থাকতে পছন্দ করেন।আর ইহা কেবলমাত্র ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমেই সম্ভব। তাছাড়া যেসকল স্থানে খুব দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করতে হয় যেমনঃ যুদ্ধক্ষেত্র, দুর্যোগস্থানে, দূর্ঘটনাকবলিত এলাকা ইত্যাদির ক্ষেত্রে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা সর্বাধিক হয়।
তাছাড়া কোন দূর্গম কোন এলাকা যেখানে ক্যাবল সংযোগের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব নয়।
সেখানে এ কমিউনিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়।
GPS অর্থাৎ Global Positioning System এর মাধ্যমে বিমান, জাহাজ, গাড়ি অথবা কোন ব্যক্তির অবস্থান চিহ্নিত করতে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে ট্যাক্সি ক্যাব প্রতিষ্ঠানগুলো এ পদ্ধতিতে তাদের গাড়িগুলোকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সহজেই পরিচালনা করতে পারে। এছাড়া পর্যটন শিল্পে কোন পর্যটকের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতেও এ পদ্ধতি বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে।
এছাড়াও বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত যন্ত্র মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোন ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের সবচেয়ে বড় প্রয়োগ। ব্রডকাস্ট বা সম্প্রচার জাতীয় অ্যাপ্লিকেশনের জন্য যেমনঃ টেলিভিশন সম্প্রচার, রেডিও সম্প্রচার ইত্যাদি।
ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের ব্যবহার হয়ে থাকে। উড়োজাহাজ কিংবা সমুদ্রগামী জাহাজ চালনায় ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়।
এছাড়াও বাসা বাড়িতে নিত্য ব্যবহার্য বিভিন্ন ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক যন্ত্র দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের ব্যবহার করা হয়।
এক্ষেত্রে রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে টেলিভিশন, এয়ারকন্ডিশনার, কম্পিউটারে ব্যবহৃত মাউস, কিবোর্ড, বাচ্চাদের বিভিন্ন দূরনিয়ন্ত্রিত খেলনা যন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা হয়ে থাকে।
ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের সুবিধা?
তার মাধ্যমের দূরত্বগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম ব্যবহার করে সহজে এ সীমাবদ্ধতা দূর করা যায়। তবে ডেটা সঞ্চালনের পথে প্রতিবন্ধকতা থাকলে তার মাধ্যমের তুলনায় ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক হয়।তাছাড়া বহনযোগ্য বা স্থানান্তরযোগ্য ডিভাইসের ক্ষেত্রে এর সংযোগ পদ্ধতি অনেক সহজ। নেটওয়ার্ক স্থাপন পদ্ধতি তার মাধ্যমের তুলনায় সহজ ও ঝামেলামুক্ত হয়। ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমে নয়েজের প্রভাব খুবই নগন্য।
ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের অসুবিধা?
ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমে প্রতিবন্ধকতা অনেক সময় ডেটা চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। এছাড়াও ডেটা চলাচল বিঘ্নিত হলে নেটওয়ার্কের দক্ষতা অনেক কমে যায়।অনাকাঙ্খিত ব্যবহারকারী কর্তৃক আক্রমনের আশংকা তুলনামূলক বেশি থাকে। তারযুক্ত নেটওয়ার্কের তুলনায় এর গতি কম থাকে। ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমে ব্যবহৃত প্রযুক্তি জীববৈচিত্রের জন্য খুবই হুমকিস্বরূপ।