ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশনের পরের কাজ হল ওয়েবসাইটটিকে হোস্টিং করা৷ অর্থাৎ ওয়েবসাইটটিকে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত কোন ওয়েব সার্ভারে আপলোড করা বা সংরক্ষণ করা৷
বিশ্বজুড়ে বহুসংখ্যক প্রতিষ্ঠান আছে যারা টাকার বিনিময়ে তাদের ওয়েব সার্ভারে কোন ওয়েবসাইটের জন্য প্রয়োজনীয় স্পেস বা জায়গা ভাড়া দেয়৷
কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার সাইটের কনটেন্ট এর উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনানুযায়ী বিভিন্ন ডিস্ক স্পেসের হোস্টিং সেবা নিয়ে থাকে৷
এক্ষেত্রে মাসিক ট্রাফিক ভলিউম সংযোগ গতি ২৪ ঘন্টার সেবা প্রতিদিন ডেটা ব্যাকআপ ব্যান্ডউইথ বা কনটেন্ট বিধি নিষেধ ডেটাবেজ অ্যাকসেস ইত্যাদি বিষয়গুলো যাচাই করে নেয়া প্রয়োজন৷
হোস্টিং |
সাধারণত যেসব কোম্পানি ডোমেইন নেম নিবন্ধন করে থাকে তাদের প্রায় সকলেই হোস্টিং সেবাও প্রদান করে৷ এদের অনেকেই বিশেষ হোস্টিং প্যাকেজ সেবাও প্রদান করে যা অনেক সময় অর্থসাশ্রয়ী হয়ে থাকে৷
সাইটটি কী ল্যাংগুয়েজ বা কী ধরনের প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে সার্ভারের ধরণ নির্ধারণ করতে হয়৷ ওয়েব হোস্ট কোম্পানির কাছ থেকে হোস্টিং প্যাকেজ কিনলে তারা ক্রেতাকে পাসওয়ার্ডসহ একটি কন্ট্রোল প্যানেল প্রদান করে৷
অনেক কোম্পানি রয়েছে যারা গ্রাহকের হয়ে নিজেরাই সাইটের তদারকি করে থাকে৷ অর্থের বিনিময়ের পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানি আছে যারা ফ্রি হোস্টিং সার্ভিস প্রদান করে৷
ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে তালিকাভুক্তকরণ?
ওয়েবে কোন তথ্য খোঁজার জন্য বেশ কিছু সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে যেমনঃ Google, Yahoo, MSN, Bing Ask ইত্যাদি৷ এসব সার্চ ইঞ্জিন ওয়েবসাইটটিকে তালিকাভুক্ত করা হলে সহজেই সাইটটিকে খুঁজে পাওয়া যায়৷
ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে যোগ করার জন্য ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইট আছে৷ এরা অর্থের বিনিময়ে সকল সার্চ ইঞ্জিন ওয়েবসাইটটিকে যুক্ত করে৷ একে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন বলা হয়৷
হোস্টিংকৃত ওয়েবসাইটটিকে আরো বেশি প্রচারমুখী করার জন্য ওয়েবসাইটটিকে সার্চ ইঞ্জিনের সাথে সংযুক্ত করতে হয়৷ এটি একটি অপশনাল ধাপ৷
কন্ট্রোল প্যানেল কি?
কন্ট্রোল প্যানেল হল যেকোন ওয়েব হোস্টিং একাউন্টের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। ওয়েব হোস্টিং একাউন্টগুলোর ব্যবস্থাপনার জন্য ওয়েব হোস্টিং কোম্পানিগুলো তাদের ক্লায়েন্টদেরকে সুবিধাজনক বিভিন্ন ধরনের কন্ট্রোল প্যানেল সরবরাহ করে থাকে৷
এ কন্ট্রোল প্যানেলে সাইটকে আপলোড করার বিভিন্ন অপশনগুলো পাওয়া যায়৷ এদের মধ্যে অতি জনপ্রিয় পাঁচটি কন্ট্রোল প্যানেল হলঃ cPanel, Supreme Control Panel, Helm, Site Worx, Plesk ইত্যাদি৷
cPanel এর মাধ্যমে সাইট আপলোড করার জন্য ওয়েব ব্রাইজারে ব্যবহারকারীর ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেসটি (ডোমেইন নেমটি) টাইপ করার পর ফরোয়ার্ড স্ল্যাশ দিয়ে তারপর cPanel টাইপ করে এন্টার চাপতে হবে (যেমনঃ https://www.example.com/cpanel) কন্ট্রোল প্যানেলের পেজটি প্রদর্শিত হবে৷
এখানে ওয়েব হোস্ট কোম্পানির কাছ থেকে প্রাপ্ত ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ডটি টাইপ করে দিয়ে Log in বাটন ক্লিক করলে কন্ট্রোল প্যানেলে প্রবেশ করবে৷ এখানে বিভিন্ন ধরনের কাজ করার জন্য বিভিন্ন অপশন পাওয়া যাবে৷
নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অপশন সিলেক্ট করে করে ডিজাইন করা সাইট (ফাইলটির) লোকেশন নির্দিষ্ট করে সাইটটি আপলোড করা যায়৷
রেজিস্ট্রেশনকৃত ডোমেইন নামে ওয়েবসাইট হোস্টিং করার পর ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহারকারী ওয়েবসাইটটিকে অ্যাকসেস করতে পারবে৷
হোস্টিং প্রযুক্তি কত প্রকার ও কি কি?
হোস্টিং প্রযুক্তি দুই ধরনের হয়ে থাকেঃ- উইন্ডোজ হোস্টিং
- লিনাক্স হোস্টিং
উইন্ডোজ হোস্টিং কি?
যদি ওয়েবসাইটটি ASP (Active Server page) Programming Language এবং Microsoft SQL Server ডেটাবেজ ব্যবহার করে তৈরি হয়ে থাকে তবে Windows Server এ হোস্টিং করতে হবে৷লিনাক্স হোস্টিং কি?
যদি ওয়েবসাইটটি PHP এবং MySQL Server ডেটাবেজ ব্যবহার করে তৈরি হয়ে থাকে, তবে Linux Server এ হোস্টিং করতে হবে৷ বাংলাদেশে PHP developer এর সংখ্যা বেশি হওয়ায় লিনাক্স হোস্টিং বেশি জনপ্রিয়৷
হোস্টিং কত প্রকার ও কি কি?
হোস্টিং তিন প্রকারের হয়ে থাকেঃ- শেয়ার্ড হোস্টিং
- ভিপিএস
- ডেডিকেটেট সার্ভার
শেয়ার্ড হোস্টিং কি?
এ হোস্টিং সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রচলিত৷ সাধারণত হোস্টিং কোম্পানিগুলো যে হোস্টিং এর অফার করে থাকে তাই হচ্ছে শেয়ার্ড হোস্টিং৷ এতে ব্যবহারকারী তার ইচ্ছেমত কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারে না৷হোস্টিং কোম্পানি যে সফটওয়্যার ব্যবহার করতে দেয় তাই ব্যবহার করতে হয়৷ একটি নরমাল সাইট চালানোর জন্য শেয়ার্ড হোস্টিং ই যথেষ্ট৷ শেয়ারড হোস্টিং এ ডেটাবেজ ই মেইল ব্যান্ডউইডথ সব কিছুই সীমিত৷
শেয়ার্ড হোস্টিং এর ভিজিটর ধারণক্ষমতা প্রায় চল্লিশ হাজার৷ তবে যদি সাইট খুব লোড হয় এবং ট্রাফিক বেশি হয় তখন শেয়ার্ড হোস্টিং দিয়ে আর কাজ হয় না৷ এক্ষেত্রে সাইটটিকে ভিপিএস অথবা ডেডিকেটেড হোস্টিং এ সরিয়ে নিতে হয়৷
ডেডিকেটেড সার্ভার কি?
সাইটটি নরমাল স্ট্যাটিক এর বদলে ডায়নামিক হয় ডেটাবেজ ব্যবহার করা হয় ভিজিটরের স্যখ্যা বেশি হয় এবং অধিক নিরাপত্তার প্রয়োজন হয় তাহলে নিজস্ব একটা ডেডিকেটেড সার্ভিরের প্রয়োজন হয়৷ ডেডিকেটেড সার্ভার অন্য কেউ শেয়ার করবে না সব রিসোর্স নিজস্ব৷নিজের পছন্দমত হার্ডওয়ার নেটওয়ার্ক স্পিড ব্যান্ডউডথের উপর নির্ভর করে একটা ডেডিকেটেড সার্ভারের জন্য প্রতি মাসে কয়েক শত থেকে কয়েক হাজার ডলার খরচ হতে পারে৷
এর পরে আবার অপারেটিং সিস্টেম ও অন্যান্য সফটওয়ার ইনস্টল নিয়মিত সেগুলো ম্যানেজমেন্ট করার ব্যাপারও আছে৷ ম্যানেজমেন্টের উপর ভিত্তি করে ডেডিকেটেড সার্ভার দুই ধরনের হয়ঃ
- ম্যানেজড হোস্টিং
- আনম্যানেজড হোস্টিং
ম্যানেজড হোস্টিং কি?
হোস্টিং কোম্পানি নিজেই যদি সব অপারেটিং সিস্টেম/সফটওয়্যার ইনস্টল করা এবং দেখাশোনার কাজ করে তবে সেটাকে বলে ম্যানেজড হোস্টিং৷ তবে এটা ম্যানেজ করার জন্য হোস্টিং কোম্পানিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিতে হতে পারে৷আনম্যানেজড হোস্টিং কি?
সফটওয়্যার ইনস্টল এবং দেখা শোনার কাজ যদি নিজেকেই সব করতে হয় তাকে বলা হয় আনম্যানেজড আনম্যানেজড হোস্টিং।ভিপিএস (ভার্চুয়াল প্রাইভেদ সার্ভার) কি?
ডেডিকেটেড সার্ভার অনেক ব্যয়বহুল৷ শেয়ার্ড হোস্টিং হল সবচেয়ে নিচু স্তরের তেমনি ডেডিকেটেড সার্ভার সবচেয়ে উঁচুমানের৷ এর মাঝামাঝি আছে ভিপিএস৷ VPS এর পূর্ণরূপ হল (Virtual Privata Server)।একটা ফিজিক্যাল সার্ভারকে ভার্চুয়ালইজেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে কয়েকটা ভাগে ভাগ করে ভার্চুয়াল কন্টেইনার বা স্লাইস বা নোড তৈরি করা হয়৷ একেকটা স্লাইস/নোড একেকটা ইন্ডিপেনডেন্ট ডেডিকেটের সার্ভারের মত কাজ করে৷
এসব স্লাইসে/নোড সব ধরনের কাজই করা যাবে সিস্টেম বুঝবে না সত্যিকারের ফিজিক্যাল হার্ডওয়্যার নাকি ভার্চুয়াল মেশিন এ চলছে৷ এভাবেই কোম্পানিগুলো কম্পিউটারে উচ্চগতিসম্পন্ন প্রসেস।
এবং অনেক মেমোরি এবং ডিস্ক যোগ করে একটা মেশিনকে ১৫-২০ টা ভিপিএস হিসেবে ভাড়া দেয়৷ একটা ভিপিএস এর মাসিক ভাড়া, ৫ ডলার থেকে শুরু করে ১০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে৷ মাঝে মাঝে ১ ডলারেও ভিপিএস ভাড়া পাওয়া যায়৷
ডোমেইন নেম ও ওয়েব হোস্টিং এর পার্থক্য?
ডোমেইন নেমঃ
- আইপি অ্যাড্রেসের alphabet ফরমেটকে ডোমেইন নেম বলা হয়ে থাকে।
- একই নামে একাধিক ডোমেইন নেম কখনো থাকতে পারে না।
- ICANN কতৃক ডোমেইন নেম নিয়ন্ত্রিত করা হয়।
- ডোমেইনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত নাম, টপলেবেল ডোমেইন এবং কান্ট্রি ডোমেইন ইত্যাদি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়।
ওয়েব হোস্টিংঃ
- ওয়েবপেজ বা ওয়েবসাইটকে কোন একটি নির্দিষ্ট ওয়েব সার্ভারে রাখাকে (আপলোড করাকে) ওয়েব হোস্টিং বলা হয়।
- একটি ওয়েব সার্ভারে সহজে একাধিক ওয়েবসাইট হোস্টিং করা যায়।
- বিভিন্ন ধরনের কোম্পানি দ্বারা তাদের সার্ভারে হোস্টিং ব্যবস্থাপনা করা হয়ে থাকে।
- হোস্টিং এর ক্ষেত্রে মেমোরি স্পেস, ব্যান্ডউইডথ, নিরাপত্তা, আপটাইম ইত্যাদি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়।