আপনার বন্ধুর মোবাইলে সংরক্ষিত গানটি আপনি আপনার মোবাইলে কপি করে নেওয়ার সময় যে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন তা হল ব্লুটুথ।
ব্লুটুথের সাহায্যে বিনা খরচে স্বল্প দূরত্বে থাকা আধুনিক প্রায় সকল ডিভাইস নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে ডেটা আদান প্রদান করতে পারে বিধায় ইহাকে তারবিহীন পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (WPAN) প্রটোকল বলা হয়।
ব্লুটুথ |
ব্লুটুথ প্রযুক্তির মাধ্যমে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তাকে পিকোনেট বলে। অর্থাৎ স্বল্প দূরত্বে অবস্থিত কোন ব্যক্তির ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোর মধ্যে তথ্য আদান প্রদানের জন্য তৈরি নেটওয়ার্ক বা Wireless Personal Area Network (WPAN) কে পিকোনেট বলে।
এছাড়াও দুটি পাশাপাশি পিকোনেট একটি সাধারণ স্লেভ নোডের মাধ্যমে যুক্ত হলে এ দুটি পিকোনেটকে একসাথে স্কাটারনেট বলে।
মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রিন্টার, ডিজিটাল ক্যামেরা এবং ভিডিও গেম কনসোলগুলোকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করতে এবং তথ্য বিনিময় করতে ব্লুটুথ একটি জনপ্রিয় উপায় হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
ব্লুটুথ এর ইতিহাস?
টেলিকম ভেন্ডর কোম্পানি এরিকসন ১৯৯৪ সালে ব্লুটুথ উদ্ভাবন করে। ডেনমার্কের রাজা হ্যারোল্ড ব্লুটুথ (Harald Bluetooth AD ৯৪০-৯৮৫) এর নামানুসারে ব্লুটুথ করা হয়েছে।ব্লুটুথ কিভাবে কাজ করে?
- অল্প দূরত্বে অবস্থানরত দুটি তারবিহীন ডিভাইসের মধ্যে ব্লুটুথ অপশন সক্রিয় করা হলে ডিভাইস দুটি একে অপরের সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগাযোগ করতে পারে।
- বর্তমানে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, পিসি, পিডিএ, মোবাইল ফোন ইত্যাদি ডিভাইসে ব্লুটুথ বিল্ট-ইন থাকে।
- ডেস্কটপ কম্পিউটারে ইউএসবি ব্লুটুথ অ্যাডাপ্টারের সাহায্যে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। সহজে বহনযোগ্য ও ভ্রাম্যমাণ ডিভাইসের ক্ষেত্রে এটি একটি জনপ্রিয় কমিউনিকেশন প্রটোকল।
ব্লুটুথ এর বৈশিষ্ট্য?
- ব্লুটুথ ২.৪৫ GHz ফ্রিকুয়েন্সিতে কাজ করে।
- এ প্রযুক্তিতে একটি পিকো-নেটের আওতায় সর্বোচ্চ ৮টি যন্ত্রের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করা যায়।
- ব্লুটুথ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনফিগার করতে পারে। সাধারণত মোবাইল থেকে মোবাইলে, ডিজিটাল ক্যামেরা থেকে ল্যাপটপে তথ্য স্থানান্তরে ব্লুটুথ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
- অতি ধীরগতিতে ডেটা স্থানান্তরিত হয়।
- ০.৭২-২৫ Mbps এর মধ্যে হয়ে থাকে।
- ব্লুটুথ এর মধ্যে ১টি মাত্র IEEE Standard রয়েছে। যথাঃ ৮০২.১৫ ।
- ব্লুটুথ এর কভারেজ এরিয়া ১০ মিটার (কোন কোন ক্ষেত্রে ১০০ মিটার) পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বিভিন্ন ডিভাইসের ieee standard?
- Hub, Switch, Router= IEEE 802.3
- Token Ring= IEEE 802.5
- LAN Cabling= IEEE 802.7
- Fiber Optic connection= IEEE 802.8
- Wifi= IEEE 802.11
- Cable Modem= IEEE 802.14
- Bluetooth= IEEE 802.15
- Zigbee= IEEE 802.15.4
- WiMAX= IEEE 802.16
ব্লুটুথ এর ব্যবহার?
- ফোনের সাথে হ্যান্ডস ফ্রি হেডসেটের সংযোগ ঘটিয়ে সাউন্ড বা ভয়েস ডেটা স্থানান্তরে ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়।
- কম্পিউটারের সাথে অন্যান্য ডিভাইসের সংযোগ ঘটানো যায় এবং সহজে তথ্য আদান প্রদান করা যায়।
- ফোন থেকে কম্পিউটারে ফাইল স্থানান্তরে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
- পিসির ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইসগুলোর সাথে তারবিহীন যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়।
- জিপিএস রিসিভার, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, বারকোড স্ক্যানার ও ট্রাফিক কন্ট্রোল ডিভাইসগুলোতে ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়।
- প্রায়ই ইনফ্রারেড ব্যবহার করা হয় এমন স্থান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্লুটুথ ব্যবহৃত হয়।
ব্লুটুথ এর সুবিধা?
- স্থির ও চলমান পরিবেশে ব্যবহারযোগ্য।
- স্বল্প দূরত্বে Data ও Voice ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে ইহা একটি লাভজনক তারবিহীন প্রটোকল বা প্রযুক্তি।
- একটি পিকোনেটে সর্বমোট ২৫৫টি স্লেভ নোড থাকে।
- তবে আটটি স্লেভের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে ও অবশিষ্ট নোডগুলো নিষ্ক্রিয় থাকে।
- ইহাতে স্বল্প তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের (UHF-Ultra High Frequency) রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করা হয়।
- কোন প্রকার সেটআপ এর প্রয়োজন হয় না, স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনফিগারযোগ্য।
- ব্লুটুথ হল মাস্টার স্লেভ কাঠামোসহ একটি প্যাকেট-ভিক্তিক প্রটোকল।
- ২.৪ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সিতে সিগন্যাল আদান প্রদান করে।
- এর ব্যান্ডউইথ ১ Mbps.
- কাছাকাছি দুটি ডিভাইসের মধ্যে ডেটা স্থানান্তরে ব্লুটুথ ব্যবহৃত হয়।
ব্লুটুথ এর অসুবিধা?
- খুব সহজেই অননুমোদিত ব্যক্তি নেটওয়ার্কের অ্যাকসেস নিতে পারে।
- দুই এর অধিক ডিভাইসে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ভালভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারে না।
- মোবাইল ফোনে ব্লুটুথ অ্যাকটিভ থাকলে ডেটা চুরির আশঙ্কা থাকে।
- ব্লুটুথ এর ইন্টারনেট গতি অনেক কম হয়।
- মোবাইল ফোনে ব্লুটুথ অপশনটি অন করা থাকলে ব্যাটারির চার্জ খরচ হতে পারে।
- ডেটা ট্রান্সফার রেট তুলনামূলকভাবে কম।