একটি নির্দিষ্ট সময়ে চ্যানেল দিয়ে যে পরিমাণ ডেটা স্থানান্তরিত হয তার পরিমাণকে ব্যান্ডউইথ হিসেবে পরিমাপ করা হয়৷ একে ডেটা ট্রান্সমিশন স্পিড হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে৷ ডেটা ট্রান্সমিশন স্পিড এর একককে bps (bit per second) এ হিসাব করা হয়৷
অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ ডেটা বিট স্থানান্তরিত হয় তার পরিমাণকে bps বলে৷ নির্দিষ্ট পরিমাণ বিপএস যখন ডেটা ট্রান্সমিশনের গতির একক হিসেবে চিহ্নিত হয় তখন সেটিকে Band বা Bandwidth বলা হয়৷
ব্যান্ডউইথ |
বিভিন্ন মাধ্যমে ডেটা স্থানান্তরের গতিকে ব্যান্ডউইথ বলা হলেও ব্যান্ডউইথ শব্দটি আসলে বিভিন্ন ধরনের ইন্টারনেট সার্ভিসের স্পিড বুঝাতে এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়৷
উচ্চ ব্যান্ডউইথ হলে প্রতি সেকেন্ডে চ্যানেলের মধ্যে দিয়ে বেশি পরিমাণ ডেটা পরিবাহিত হবে৷ এর ফলে দ্রতগতির সার্ভিস পাওয়া যায়৷ যেমনঃ ছবি বা ভিডিও এর মতো বেশি পরিমাণের ডেটা এক্ষেত্রে তুলনামূলক কম সময়ে ডাউনলোড হবে৷
আর ব্যান্ডউইথ কম হলে চ্যানেলের মধ্যে দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে পরিবাহিত ডেটার পরিমাণ কম হবে৷ এর ফলে ছবি বা ভিডিও মতো বেশি পরিমাণের ডেটাগুলো আসতে অনেক সময় লাগবে বা অনেক ক্ষেত্রে তা নাও আসতে পারে৷
উচ্চ ব্যান্ডুউইথ ইন্টারনেট কানেকশন থাকলে অনেক বেশি ডেটা দ্রুতসময়ে ডাউনলোড ও আপলোড করা যায়৷ ইন্টারনেটে স্বাচ্ছন্দ্যে ভিডিও দেখা যায় এবং অডিও শোনা যায়৷
ব্যান্ডউইথ একক হিসাব?
প্রতি সেকেন্ডে একক বিট ডেটা স্থানান্তরিত হওয়ার হারকে bps (bit per second) বলে৷ তথ্যের ক্ষুদ্রতম একক হল বিট (Bit)।Bit এর পুরো নাম Bynary Digit। এক বিট সমান বাইনারি তথ্য 0 বা 1। ৮ বিটে এক বাইট (Byte) সমান এক ক্যারেক্টারঃ- bps অর্থ হল bit per second (1 বিট =1 বা 0)
- Kbps হল Kilobits per second (1024 বিট = 1 কিলোবিট)
- Mbps হল megabits per second (1024 কিলোবিট = 1 মেগাবিট)
- Gbps হল gigabits per second (1024 মেগাবিট = 1 গিগাবিট)
- Tbps হল Terabits per second (1024 গিগাবট =1 টেরাবিট)
- Pbps হল petabit per second (1024 টেরাবিট =1 পেটাবিট)
সমস্যা
একটি চ্যানেল দিয়ে 3 সেকেন্ডে 8100 বিট স্থানান্তরিত হলে তার ব্যান্ডউইথ কত?সমাধান
3 সেকেন্ডে স্থানান্তরিত হয় 8100 বিট 1 সেকেন্ডে স্থানান্তরিত হয় 8100÷3= 2700 বিটসুতরাং ব্যান্ডউইথ = 2700 bps
সমস্যা
যদি আপনার ইন্টারনেট স্পিড হয় ৫১২ কিলোবিট পার সেকেন্ডে (Kbps) তাহলে ৫ মেগাবাইটের (MB) একটি ফাইল ডাউনলোড হতে আপনার কম্পিউটারে কত সময় লাগতে পারে?সমধান
৫ মেগাবাইট (MB) = (১০২৪×৫×৮) কিলোবিট = ৪০, ৯৬০ কিলোবিট৷ ৫১২ কিলোবিট ডাউনলোড হতে ১ সেকেন্ড সময় লাগলে ৪০,৯৬০ কিলোবিট ডাউনলোড হতে সময় লাগবে= ৪০৯৬০÷৫১২= ৮০ সেকেন্ড =১ মিনিটি ২০ সেকেন্ড৷ব্যান্ডউইথ কত প্রকার ও কি কি?
ডেটা ট্রান্সফার গতির উপর ভিত্তি করে ব্যান্ডউইথ কমিউনিকেশন গতিকে তিনভাগে ভাগ করা হয়ঃ- ন্যারোব্যান্ড (Narrowband)
- ভয়েসব্যান্ড (Voiceband)
- ব্রডব্যান্ড (Broadband)
ন্যারোব্যান্ড (Narrowband) কি?
যে ব্যান্ডে ৪৫ Bps হতে ৩০০ bps গতিতে ডেটা ট্রান্সফার কিংবা স্থানান্তর করা যায় তাকে ন্যারো ব্যান্ড বলা হয়। আর এই ব্যান্ডটি খুবই ধীর গতি সম্পন্ন হয়ে থাকে। তাছাড়া টেলিগ্রাফিতে ন্যারো ব্যান্ড ব্যবহার করা হয়।অত্যন্ত ধীর গতি সম্পন্ন হওয়ায় বর্তমানে এই ব্যান্ডটি ব্যবহৃত হয় না বললেই চলে। ন্যারোব্যান্ড সাধারণত ৪৫ থেকে ৩০০ bps পর্যন্ত হয়ে থাকে৷ এই ব্যাড ধীরগতিসম্পন্ন ডেটা ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়৷
সাধারণত টেলিফোনির ক্ষেত্রে এই ব্যান্ডটির ব্যবহার অধিক লক্ষ্য করা যায়৷ টেলিফোনির ক্ষেত্রে ন্যারোব্যান্ড সাধারণত ৩০০থেকে ৩৪০০ হার্টজ (Hz) ফ্রিক্যুয়েন্সি প্রদান করে থাকে৷
যেহেতু শব্দ তরঙ্গ ন্যারো রেঞ্জের ফ্রিকোয়েন্সীতে পরিবাহিত হয়ে থাকে তাই ন্যারোব্যান্ডকে অডিও স্প্রেকটামের সাথে সমন্বিতভাবে শব্দ ধারণে ব্যবহার করা যায়৷
এজন্য একে সাব ভয়েসব্যান্ডও বলা হয়৷ একসময় টেলিগ্রাফে টেক্সট ম্যাসেজ প্রদানে ন্যারোব্যান্ড ব্যবহৃত হতো৷ তবে বর্তমানে তুলনামূলকভাবে খুবই সংক্ষিপ্ত দূরত্বে এবং হাই কোয়ালিটি ভয়েস ডেটা প্রয়োজন নেই এমন যোগাযোগের জন্য ন্যারোব্যান্ড ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পুলিশ বা অ্যাম্বুলেন্স পারস্পরিক কমিউনিকেশন ওয়াকি টকি ব্লুটুথ জিগবি টু ওয়ে রেডিও ইত্যাদি৷ ন্যারোব্যান্ড ব্যবহৃত হয় এমন একটি ডিভাইস হল পেজার (Pager)৷
ন্যারো ব্যান্ডের বৈশিষ্ট্য?
- এর ডেটা ট্রান্সমিশন স্পীড ৪৫ bps থেকে ৩০০ bps হয়।
- এটি ধীরগতির একটি ব্যান্ডউইথ।
- একে Sub voice Band ও বলা হয়।
ন্যারো ব্যান্ডের ব্যবহার?
টেলিগ্রাফিতে ব্যবহার করা হয়।ভয়েসব্যান্ড (Voiceband) কি?
যে ব্যান্ডে ১২০০ bps হতে সর্বোচ্চ ৯৬০০ bps বা ৯.৬ kbps (Kilo bit per second) গতিতে ডেটা ট্রান্সমিট করা যায় তাকে ভয়েস ব্যান্ড বলা হয়। সাধারণত টেলিফোনে এ ধরনের ব্যান্ড ব্যবহার করা হয়।এছাড়াও কম্পিউটার থেকে প্রিন্টারে ডেটা ট্রান্সমিট করার জন্যও ভয়েস ব্যান্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে।ভয়েসব্যান্ডের গতি সাধারণত 9600 bps পর্যন্ত হয়ে থাকে৷ এটি সাধারণত টেলিফোনে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷
টেলিফোন লাইনে এ ব্যান্ডে প্রায় 300 থেকে 3400 হার্টজ (Hz)ফ্রিকোয়েন্সিতে তথ্য স্থানান্তর করা যায়৷ টেলিফোনির ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি ডিভবশন মাল্টিপ্লেক্সিং এ সাধারণত 4 কিলোহার্টজ ক্যারিয়ার স্পেনিং ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷ কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷
কোন ডিভাইসের ব্যান্ডউইথ 300 bps এর অধিক হতে 9 kbps পর্যন্ত হলে তা সাধারণতভাবে ভয়েসব্যান্ড হিসেবে গণ্য হতে পারে৷ কেননা ভয়েসব্যান্ডের সীমা 9600 bps হওয়ায় তা প্রায় 9 Kbps (1 kb = 1024 bits) সমতুল্য হবে৷
ভয়েসব্যান্ডকে ভয়েস ফ্রিকোয়েন্সি নামেও অভিহিত করা হয়৷ আগে ইন্টারনেট একসেস করার জন্য যে ডায়াল আপ মডেমটি ব্যবহার করা হতো সেটি ভয়েসব্যান্ডের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার৷ এই ডায়ালআপ ভয়েসব্যান্ড মডেমগুলোর ব্যান্ডউইখ 56 kbps.
ভয়েস ব্যান্ডের বৈশিষ্ট?
এর ডেটা ট্রান্সমিশন স্পীড সর্বোচ্চ ৯৬০০ bps হয়।ভয়েস ব্যান্ডের ব্যবহার?
টেলিফোনে ব্যবহার করা হয়।ব্রডব্যান্ড কি?
যে ব্যান্ডে কমপক্ষে ১ Mbps (Mega bit per second) হতে অত্যন্ত উচ্চগতি পর্যন্ত হয় তাকে ব্রডব্রান্ড বলে। এর সবোচ্চ গতি আনলিমিটেড হয়। এটা হতে পারে কয়েকশত Mbps কিংবা তার চেয়েও অনেক বেশি।সাধারণত উচ্চগতি সম্পন্ন ডেটা স্থানান্তরে ব্রডব্রান্ড ব্যবহার করা হয়। ফাইবার অপটিক্যাল ডেটা স্থানান্তরে ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন, রেডিও লিংক ও মাইক্রোওয়েভ কমিউনিকেশনেও ব্রড ব্যান্ড ব্যবহার করা হয়।
ব্রডব্যান্ডের বৈশিষ্ট্য?
- ডেটা ট্রান্সমিশন স্পীড কমপক্ষে 1 Mbps হবে।
- কো-এক্সিয়াল ক্যাবল এবং অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্যে ডেটা ট্রান্সফারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ব্রডব্যান্ডের ব্যবহার?
- স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনে ব্যবহার করা হয়।
- কমিউনিকেশেনে ব্যবহার করা হয়।
- মাইক্রোওয়েভে ব্যবহার করা হয়।