আইসি কি | আইসি কত প্রকার

Ic এর পূর্ণরূপ কি?

IC এর পূর্ণরুপ হচ্ছে (Integrated Circuit)। 

আইসি কাকে বলে?

ট্রানজিস্টর, রেজিস্টর, ক্যাপাসিটর এর সমন্বয়ে যে ইলেকট্রনিক সার্কিট বোর্ড তৈরি করা হয় তাকে আইসি বা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বলা হয়।
আইসি
আইসি

তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে অল্প জায়গায় অনেক বেশি ট্রানজিস্টর বসানো শুরু হয় ও এক সাথে অল্প জায়গায় অনেক বেশি ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে যে আইসি বানানো হয় তার নাম হল Large scale integration (LSI)। 

অবশেষে সেটা আরও উন্নয়ন করে নাম দেওয়া হয় Very Large Scale Integration বা (VLSI)।

আইসি কি?

আইসি (IC) হল সমন্বিত বর্তনী (Integrated Circuit) এর সংক্ষিপ্ত রূপ৷ এক ধরনের বৈদ্যুতিক বর্তনীকে সিলিকন  পাতের ওপর অতি ক্ষুদ্রাকারে তৈরি করার পদ্ধতি৷ একে চিপ বা মাইক্রোচিপও বলা হয়৷ 

বড় একটি চিপের ওপর ট্রানজিস্টর ডায়োড রেজিস্টার ও ক্যাপাসিটর স্থাপন করে এটি তৈরি করা হয়৷ ১৯৫২ সালে জি ডব্লিউ এ রাডার নামের একজন রাডার বিশেষজ্ঞ ওয়াশিংটনে এক সিম্পোজিয়ামে প্রথম আইসি এর ধারণা প্রস্তাব করেন৷ 

পরবর্তীতে ১৯৫৮  সালে টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্ট এর জ্যাক ক্যালবি প্রথম ট্রানজিস্টর ও ক্যাপাসিটারকে সমন্বিত করে আইসি উদ্ভাবন করেন৷ 

হাজার হাজার বা লক্ষ লক্ষ সার্কিট দিয়ে তৈরি আইসি এমপ্লিফায়ার ওসিলেটর টাইমার কাউন্টার কম্পিউটার মেমোরি অথবা মাইক্রোপ্রসেসর হিসেবে কাজ করতে পারে৷ 

বর্তমানে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে ১ বর্গ ইঞ্চিতে ১.৫ বিলিয়ন (১৫০ কোটি) ট্রান্সজিস্টর স্থাপন করে একটি আইসি বা মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করা হয়৷ 

১৯৭১ সালে ইন্টেল কর্তৃক আবিষ্কৃত intel 4004 প্রসেসরের ট্রানজিস্টর সংখ্যা ছিল ২৩০০। ২০১৫ সালে বের হওয়া intel core i7 প্রসেসরের ট্রানজিস্টর সংখ্যা হল ১৪ কোটি৷

আইসি কত প্রকার ও কি কি?

বিভিন্ন ধরনের পরিমিতির উপর ভিত্তি করে যেমনঃ ট্রানজিস্টর সংখ্যা, অ্যাক্টিভ ডিভাইস ইত্যাদি দ্বারা আইসির শ্রেনিবিভাগ করা হয়েছে। আইসি মূলত দুই ধরনের হয়ঃ
  • এনালগ আইসি (Analog IC) এবং
  • ডিজিটাল আইসি (Digital IC)

এনালগ আইসি (Analog IC) কি?

এই জাতীয় আইসিতে ইনপুট ও আউটপুট উভয় সংকেতই অবিচ্ছিন্ন থাকে। এদেরকে লিনিয়াট আইসিও বলা হয়ে থাকে। এদের আউটপুট সিগন্যাল স্তর ইনপুট সিগন্যাল স্তরের উপর নির্ভর করে ও আউটপুট সিগন্যাল স্তরটি ইনপুট সিগন্যাল স্তরের লিনিয়ার ফাংশন হয়।

লিনিয়ার আইসি বা অ্যানালগ আইসিগুলো সাধারণত অডিও ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্ধক (Audio frequency amplifier) ও রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্ধক (Radio frequence amplifier) হিসাবে ব্যবহার করা হয়। 

Op amps, ভোল্টেজ রেগুলেটরস, comparators ও Timer গুলো হল লিনিয়ার আইসি বা এনালগ আইসির সুপরিচিত কয়েকটি উদাহরণ।

ডিজিটাল আইসি (Digital IC) কি?

বিভিন্ন ধরনের লজিক গেট যেমনঃ AND gate, OR gate, NAND gate, XOR gate, flip flops এবং microprocessor গুলো হল ডিজিটাল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের কিছু সুপরিচিত উদাহরণ। আর এই আইসিগুলো বাইনারি ডেটা যেমনঃ 0 বা 1 নিয়ে অপারেট করে থাকে। 

সাধারণত ডিজিটাল সার্কিটে ০ মানে হল ০ ভোল্ট ও ১ মানে হল ৫ ভোল্ট। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রনিক প্রজেক্টে ডিজিটাল আইসি ব্যবহার করা হয়। আইসির প্রধান উপাদান হচ্ছে ট্রানজিস্টর।

আইসির এর ব্যবহার ভেদে এই ট্রানজিস্টর বাইপোলার কিংবা ফিল্ড এফেক্ট ট্রানজিস্টর হতে পারে। যেহেতু দিন দিন প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে, সেই সঙ্গে একটি একক আইসি চিপে অন্তর্ভুক্ত ট্রানজিস্টারের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে।

একটি একক চিপে অন্তর্ভুক্ত ট্রানজিস্টারের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে আইসিগুলোকে সাধারণত ৫টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছেঃ

Group-1

Small Scale Integration বা (SSI)
যেখানে একটি একক আইসি চিপে ১ থেকে ১০০টি ট্রানজিস্টর অন্তর্ভুক্ত থাকে।

Group-2

Medium Scale Integration বা (MSI)
যেখানে ১০০ থেকে ১০০০টি ট্রানজিস্টর একটি একক আইসি চিপে অন্তর্ভুক্ত থাকে।

Group-3

Large Scale Integration বা (LSI)
এলএসআই ১০০০ থেকে ২০,০০০টি ট্রানজিস্টর একক আইসি চিপে অন্তর্ভুক্ত থাকে।

Group-4

Very Large Scale Integration বা (VLSI):
ভিএলএসআই আইসি হয় যখন, তখন একটি একক IC চিপে ২০,০০-১০,০০,০০০ ট্রানজিস্টর অন্তর্ভুক্ত থাকে।

Group-5

Ultra Large Scale Integration বা (ULSI)
ইউএলএসএল একক আইসি চিপে ১০,০০,০০০-১,০০,০০,০০০ ট্রানজিস্টর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আইসি এর ব্যবহার সক্রিয় ডিভাইসের উপর নির্ভর করে। এটিকে আবার বাইপোলার আইসি (Bipolar IC) ও ইউনিপোলার আইসি (Unipolar IC) হিসাবে শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে।

বাইপোলার আইসিগুলোর আসল উপাদান হচ্ছে বাইপোলার জংশন ট্রানজিস্টর। তবে ইউনিপোলার আইসিতে মূল উপাদান হল ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর বা এমওএসএফইটি (MOSFET)।

IC এর কাজ কি?

IC হল সকল আধুনিক ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মৌলিক বিল্ডিং ব্লক। ইহা একটি পরিবর্ধক, অসিলেটর, লজিক গেট, টাইমার, কাউন্টার, মাইক্রোকন্ট্রোলার বা মাইক্রোপ্রসেসর, কম্পিউটার মেমরি হিসাবে কাজ করতে পারে।

আইসির সুবিধা (Advantages of IC) কি কি?

  • স্বল্প সংখ্যক সংযোগ থাকায় এর বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি থাকে।
  • ইহা আকার অত্যন্ত ছোট হয়।
  • প্রায় ২০,০০০ ইলেক্ট্রনিক উপাদান আইসি চিপের একক বর্গ ইঞ্চি স্থানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
  • অনেক জটিল সার্কিট একটি একক চিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে।
  • তাই এটি একটি জটিল বৈদ্যুতিক সার্কিটের নকশাকে সহজতর করে থাকে। 
  • এছাড়াও আইসি সার্কিটের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • ইহা ওজনে হালকা হয়।
  • আইসিতে একই সাথে অনেকগুলো চিপ তৈরি হয় বলে এর মূল্য খুবই কম হয়।
  • এতে কম পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়।
  • আইসিতে যদি তাপমাত্রা কম বেশি হয়।
  • তবুও এর কার্যকারিতা সহজে নষ্ট হয় না।
  • প্যারাসাইটিক ক্যাপাসিট্যান্সের প্রভাব না থাকায়, এদের অপারেটিং গতি অনেক উচ্চতর হয়ে থাকে।

আইসির অসুবিধা (Disadvantages of IC) কি কি?

  • চিপের অংশগুলো পৃথক করা যায় না কিংবা পুনঃস্থাপন করা যায় না। 
  • যার কারণে আইসি নষ্ট হলে মেরামত করা সম্ভব হয় না।
  • ইহার আকার ছোট হওয়ায় কারেন্ট বৃদ্ধির সাথে সাথে, IC প্রয়োজনীয় হারে তাপ নিঃসরণ করতে সক্ষম হয় না। 
  • আর এজন্য প্রায়শই IC গুলো অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে।
Textile BD

Founder and Editor of Textile BD. He is a Textile Blogger & Entrepreneur. He is working as a textile job in Bangladeshi companies.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন