একাধিক চলনশীল ডিভাইস অথবা একটি চলনশীল ও অন্যটি স্থির ডিভাইসের মধ্যে ডেটা/তথ্য আদান প্রদান এর জন্য ব্যবহৃত কমিউনিকেশন সিস্টেমকে মোবাইল কমিউনিকেশন বলা হয়৷
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ক্যাবল ছাড়া যোগাযোগের প্রযুক্তি ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের উৎকর্ষতার ফসল হল মোবাইল কমিউনিকেশন৷
মোবাইল ফোন |
তবে চলমান অবস্থাতে ডেটা কমিউনিকেশনের বিশেষ সুবিধাটির জন্য এটি মোবাইল কমিউনিকেশন হিসেবেই ব্যাপকভাবে সুপরিচিত৷
মোবাইল ফোন কিভাবে কাজ করে?
বর্তমানে সারা পৃথিবীতে মোবাইল কমিউনিকেশন একটি অতি প্রয়োজনীয় এবং জরুরি সেবা বা সার্ভিস হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে৷ এর জন্য অসংখ্য দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার রয়েছে৷
কোন মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার যে ভৌগোলিক এলাকা জুড়ে তার স্থানীয় সেবাকে বিস্তৃত রাখে তাকে ঐ মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারের নেটওয়ার্ক কাভারেজ এরিয়া বলা হয় অর্থাৎ মোবাইল কোম্পানীগুলোর স্থানীয় সার্ভিস প্রধানত দেশীয় সীমা দ্বারা নির্ধারিত৷
টেলিকমিউনিকেশনের টার্ম অনুযায়ী এরা ক্যারিয়ার নামে পরিচিত৷ নির্দিষ্ট দেশের ক্যারিয়ারগুলো ঐ দেশের টেলিকমিউনিকেশনের রেগুলেশন বা আইন কানুন দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে৷
বিভিন্ন দেশের ক্যারিয়ারগুলো দেশীর বা আন্তর্জাতিকভাবে পরস্পরের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে নিজেদের নেটওয়ার্ক কাভারেজকে প্রয়োজনে বর্ধিতও করতে পারে।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে মোবাইল সার্ভিসগুলো নির্দিষ্ট ক্যারিয়ার নির্ভর হয়ে থাকে৷ এজন্য প্রত্যেক ক্যারিয়ার এর নেটওয়ার্ক কভারেজ এরিয়াকে ছোট ছোট অংশ বা স্প্যান এ বিভক্ত করে যাকে বলা হয় সেল।
এবং মোবাইল কমিউনিকেশনে স্থাপিত এক একটি ফিক্সড ল্যান্ড স্টেশন বা বেজ স্টেশনটিই হল সেল যেটি মোবাইল ফোনের জন্য প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক কভারেজ প্রদান করে৷
আর এগুলোকে সেলসাইটও বলা হয়ে থাকে এবং এর প্রদত্ত নেটওয়ার্ক কাভারেজকে সেল নেটওয়ার্ক বলে৷ মোবাইল ব্যবহারকারী চলমান অবস্থায় এক সেল এরিয়া থেকে অন্য সেল এরিয়ায় প্রবেশ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার মোবাইল ইউনিটটি পূর্বের সেল এরিয়ার সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে।
বর্তমান সেল এরিয়ার সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়৷ এভাবে নির্দিষ্ট ক্যারিয়ারের কাভারেজ এরিয়ার মধ্যে থাকা অবস্থায় মোবাইল ইউনিটটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক সেল কাভারেজ থেকে অন্য সেল কভারেজ সুইচ করার মাধ্যমে অবিরতভাবে নেটওয়ার্ক সংযুক্ত থাকে।
এবং আমরা ইচ্ছেমতো চলাফেরা করা বা স্থির থাকা যে কোন অবস্থাতেই আমাদের মোবাইল ফোনটির মাধ্যমে ডেটা কমিউনিকেশনের চালিয়ে যেতে পারি।
মোবাইল ফোন প্রযুক্তি কত প্রকার?
বর্তমানে প্রচলিত মোবাইল ফোন প্রযুক্তিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়ঃ- জিএসএম (GSM)
- সিডিএমএ (CDMA)
জিএসএম পূর্ণরুপ?
জিএসএম এর পূর্ণরূপ হল Global System for Mobile Communication (GSM)।জিএসএম কি?
GSM হল মোবাইল টেলিফোনি সিস্টেমের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্ট্যান্ডার্ড৷ একে দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন সিস্টেম হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের মধ্যে রোমিং চুক্তি থাকার ফলে বিশ্বের যেকোন স্থান থেকে যেকোন ব্যক্তি জিএসএম এর আওতায় থাকা অবস্থায় নিজের মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করতে পারেন৷
স্বল্প মূল্যের শর্ট মেসেজ সার্ভিস এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও জিএসএম পথিকৃৎ৷ সেলুলার নেটওয়ার্ক বিধায় নির্দিষ্ট এলাকাতে মোবাইল ফোনগুলো জিএসএম এর সাথে সংযুক্ত হয়৷
এর সর্বোচ্চ দূরত্ব হল ৩৫ কিলোমিটার৷ এক দেশের তৈরি জিএসএম হ্যান্ডসেট অন্য দেশে সাধারণত কোন সমস্যা ছাড়াই ব্যবহার করা যায়৷
সিডিএমএ কি?
CDMA এর পুরো অর্থ হল Code Division Multiple Access এটি একটি চ্যানেল অ্যাকসেস মেথড। যা কিনা বিভিন্ন ধরনের রেডিও কমিউনিকেশর প্রযুক্তির দ্বারা বাস্তবায়িত হয়৷ সিপিএমএ প্রযুক্তিতে ভয়েস এবং ডেটা অ্যাপ্লিকেশনে অনেক ব্যান্ডউইথ পাওয়া যায়৷সিডিএমএ তে এখন ২জি এবং থ্রিজি উভয় প্রযিক্তিই ব্যবহৃত হচ্ছে। সিডিএমএ পদ্ধতিতে বেতার তরঙ্গ ব্যান্ডকে কতগুলো ক্যারিয়ারে বিভক্ত করা হয় যা ১.২৫ মেগাহার্টজ প্রশস্ত৷
প্রত্যেক গ্রাহকের জন্য আলাদা কোড দেয়া হয় এবং এই কোড পুরো ক্যারিয়ারের মধ্যে বিস্তৃত করা হয়৷ হ্যান্ডসেটগুলো সাধারণত স্বল্প শক্তিতে ট্রান্সমিট হয়৷ যার ফলে ব্যাটারির আয়ু বেড যায়, দীর্ঘ টক টাইম ও স্ট্যান্ডবাই টাইম পাওয়া যায়৷
জিএসএম এর চাইতে এর কল কস্ট তুলনামূলকভাবে কম৷ এতে অত্যন্ত নিখুঁত মানের ভয়েস, অনেক বেশি প্রাইভেসি এবং অত্যন্ত সমৃদ্ধ মানের কল সুবিধা পাওয়া যায়৷
সিডিএমএ ফোনগুলো স্বল্পশক্তিতে ট্রান্সমিট হয় বিধায় এতে রেডিয়েশনের পরিমাণ তুলনামূলক কম হয়। এজন্য অনেকে এগুলোকে গ্রীন ফোন বলে থাকে৷
GSM এবং CDMA এর মধ্যে পার্থক্য?
জিএসএমঃ
- GSM এ ব্যান্ডউইথ এর উত্তম সদ্ব্যবহারের জন্য ব্যান্ডউইথকে টাইম স্লটে বিভক্ত করা হয়৷
- এটি অনেক বেশি পরিণত একটি প্রযুক্তি যার ফলে শক্তিশালী ফিচারসহ অনেক বেশি স্থায়ী নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়৷
- এর ডেটা ট্রান্সফার রেট ৫৬ kbps।
- বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয় যা প্রায় ২ ওয়াট।
- এর সেল কভারেজ এরিয়া ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
- আন্তর্জাতিক রোমিং এর সুবিধা আছে।
- হ্যান্ডঅফ পদ্ধতি জটিল হয়। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে কল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
- ফিক্সড সেল সাইট রেঞ্জ হল সর্বোচ্চ ৩৫ কিলোমিটার যার কারিগরি সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷
- বিশ্বের ৮০% GSM স্ট্যান্ডার্ডটি ব্যবহার করে।
- এর কলের খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি৷
- আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা পাওয়া যায়৷
- GSM হ্যান্ডসেটগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি শক্তিতে ট্রান্সমিট হয়৷ ফলে ব্যাটারির আয়ু কম থাকে টক টাইস ও স্ট্যান্ডাবাই টাইম কমে আসে৷
সিডিএমএঃ
- সিডিএমএতে প্রতিটি ব্যবহারকারীর জন্য আলাদাভাবে একটি ইউনিক কোড ও ব্যান্ডউইথ বরাদ্দ করা হয়৷
- CDMA তুলনামূলকভকবে নতুন একটি প্রযুক্তি এবং এর নেটওয়ার্কটি GSM এর মতো ততটা পরিপক্ব নয়৷
- এর ডেটা ট্রান্সফার রেট (১৫৪-৬১৪) kbps।
- বিদ্যুৎ খরচ কম যা প্রায় ২০০ মাইক্রোওয়াট হয়।
- এর সেল কভারেজ এরিয়া ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
- আন্তর্জাতিক রোমিং এর সুবিধা নেই।
- এর হ্যান্ডঅফ পদ্ধতি সহজ। যার ফলে সহজে কল বিচ্ছিন্ন হয় না।
- CDMA এর বিস্তৃত স্পেকট্রাম সিগন্যাল অনেক বেশি কভারেজ প্রদাণ করে৷
- সীমিত সংখ্যক CDMA প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে৷
- আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা পাওয়া যায় না৷
- CDMA হ্যান্ডসেটগুলো সাধারণত স্বল্প শক্তিতে ট্রান্সমিট হয়৷
- যার ফলে ব্যাটারির আয়ু বেড়ে যায় দীর্ঘ টক টাইম ও স্ট্যান্ডবাই টাইম পাওয়া যায়৷
মোবাইল ফোনের সুবিধা?
আধুনিক সুবিধা হিসেবে মোবাইলে যেসব সুবিধা পাওয়া যায়ঃ
- এর মাধ্যমে দেশ-বিদেশের যেকোন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর কাছে এসএমএস বা খুদে বার্তা প্রেরণ ও গ্রহণ করা যায়।
- দেশ বিদেশের যেকোন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর কাছে মাল্টিমিডিয়া মেসেজ বা এসএমএস প্রেরণ ও গ্রহণ করা যায়। ইন্টারনেটযুক্ত স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইমেইল গ্রহণ/প্রেরণ করা যায়, ভিডিও কল করা যায়, ভয়েস ও ভিডিও চ্যাটিং করা যায়।
- জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের সুবিধা উপভোগ করা যায়।
- গান শোনা ও ভিডিও দেখা যায় এবং অডিও ও ভিডিও রেকর্ড করা যায়। ব্লুটুথ ও ইনফ্রারেড প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য আদান প্রদান করা যায়, ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যায়।