প্রকৃতি থেকেই মানুষ রং বা কালারকে চিনতে পেরেছে৷ প্রকৃতির বিভিন্ন বৃক্ষরাজি ফুল ফল পাতা মেঘমুক্ত আকাশ ইত্যাদি মানুষকে শুধু অভিভূত করেনি শিখিয়েছে রং এর বিভিন্ন নাম৷ তাই স্মরণাতীত কাল থেকেই মানব অনুভূতিতে রং বা কালারের প্রভাব সুস্পষ্ট ও ব্যাপক৷ অবোধ শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকল মানুষেরই রয়েছে রং এর প্রতি ভিন্ন মাত্রিক মাত্রিক আকর্ষণ৷
পোশাক বা বস্ত্র লজ্জা নিবারণ ছাড়াও মানুষের সৌন্দর্য বর্ধনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ তাই এগুলোর ক্ষেত্রেও মানুষের অভিরুচির বৈচিত্র্য ব্যাপকতর৷ মানুষ পোশাক পরিধানের অভ্যাস গড়ামাত্রই পোশাকের উপর বিভিন্ন প্রাকৃতিক রং এর লেগে যাওয়া দাগ থেকেই সম্ভবত মানুষের মনে রং দিয়ে বস্ত্র রাঙ্গানো সংক্রান্ত ধারণার সূত্রপাত৷
কালার হুইল |
বাংলা ভাষায় প্রচলিত অর্থে রং এর দুটি অর্থ করা যেতে পারে৷ প্রথমত রং দ্বারা কোন বস্তুর বর্ণ বুঝানো যেতে পারে৷ যেমন জামাটি লাল রং এর দ্বিতীয়ত ঐ বস্তুর ডাইং (রঞ্জন) কী দ্বারা হয়েছে তাও রং শব্দটি ব্যবহার করে অনেক সময় বুঝানো হয়ে থাকে৷ যেমন জামাটি গাঢ় লাল রং দিয়ে ডাইং করা হয়েছে৷
ইংরেজিতে রং এর প্রথম বর্ণটির প্রতিশব্দ হল কালার (Colour) আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে এর প্রতিশব্দ হতে পারে ডাই (Dye) বা পিগমেন্ট (Pigment)। কালার বা বর্ণ হল একটি আলোর নির্দিষ্ট পরিসর বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যর আকৃতি (appearance) এর প্রভাব যা বস্তু হতে প্রতিফলিত হয়ে সৃষ্টি হয় এবং মানব চোখ প্রতিফলিত হয়ে একটি নির্দিষ্ট অনুভূতির সৃষ্টি করে৷
ইহা এক প্রকার আলোকশক্তি৷ একে ধরা যায় না ও ছোঁয়া যায় না অর্থাৎ ইহা অ্যাবস্ট্রাকট (Abstract)। আবার ব্রিটিশ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত ও অধ্যাপক মেনটায়ার (Prof. Mentyre) কর্তৃক সম্পাদিত টেক্সটাইল টার্মস এবং ডেফিনেশন বইতে রং বা কালারের সংজ্ঞা এভাবে দেয়া হয়েছে কোন বস্তু দ্বারা আলোর বিচ্ছুরণ বা তার মধ্য দিয়ে আলো প্রতিসরণ অথবা তা হতে প্রতিফলিত আলো দ্বারা সৃষ্ট এক বিশেষ ধরনের চাক্ষুস অনুভূতিই হচ্ছে রং বা কালার৷
(The particular visual sensation caused by the light emitted by transmitted through or reflected from the object) মানুষের কাছে রং এর চেহারা (appearance) আসলে ইন্দ্রিয়ের উপর তার অনুভূতি ও মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট এক মনস্তাত্ত্বিক বাস্তব সাড়া (Phychophysical response) বিশেষ৷
এখানে রং এর অনুভূতি দ্বারা বুঝানো হয়েছে ঐ সকল বৈশিষ্ট্যসমূহ যা চক্ষুকে ও মস্তিষ্ককে রং এর গুণগত দিক সম্পর্কিত পার্থক্য নির্ণয়ে সক্ষম করে৷ খুব সহজে বলতে গেলে কোন বস্তুকে তখন যখন আমরা নির্দিষ্ট কোনভাবে কালারড দেখতে পাই বস্তুটির ঐ বাহ্যিক রঙিন অবস্থাই তার রং অর্থাৎ আমাদের চক্ষু দ্বারা যদি দেখা যায় কোন বস্তু নীল রং এর তবে ঐ বস্তুর রং হচ্ছে নীল৷
কোন বস্তু দ্বারা আলোর বিচ্ছুরণ বা তার মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণ অথবা তা থেকে প্রতিফলিত আলো দ্বারা সৃষ্ট এক বিশেষ ধরনের চাক্ষুষ অনুভূতি হচ্ছে কালার (Colour)। এছাড়া কালার বা বর্ণ হল একটি নির্দিষ্ট পরিসর বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আকৃতি৷