বর্তমান মুক্ত বাজার অর্থনীতির ক্ষেত্রে কোন একটি প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মালিক এবং শ্রমিকের মধ্যে সু-সম্পর্ক রক্ষা করা একান্ত জরুরি। উৎপাদনে গতিশীলতা আনয়ন ও উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান রক্ষার উপর জোর দিয়ে এটি সুন্দর, সুশৃংখল এবং আদর্শ কারখানা গঠনে মালিক এবং শ্রমিকের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করে কর্তৃপক্ষ একটি "শ্রমিক অংশগ্রহনকারী কমিটি" গঠনের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
যার ফলে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ২০৫ থেকে ২০৮ ধারা মোতাবেক ও আইএলও এর ধারণা অনুযায়ী একটি “শ্রমিক অংশগ্রহনকারী কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শ্রমিক অংশগ্রহণকারী কমিটি কাজ?
- নীতিমালা (Policy)
- গঠনপ্রণালী (Constitution)
নীতিমালা (Policy)
সকল ক্ষেত্রে দেশের বিদ্যমান শ্রম আইনের আলোকে ও ক্রেতার চাহিদার ভিত্তিতে শ্রমিক অংশগ্রহণকারী কমিটির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে থাকেন। যেমনঃ কমিটির সদস্যগণ কোন রাজনৈতিক দলের কিংবা সংগঠনের সদস্য হতে পারবেনা ও স্থানীয় জনগণ কিংবা বহিরাগত কারও সহিত সম্পর্কযুক্ত থাকবে না।কমিটির সদস্যগণ কারখানার গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষতিসাধন করে কোন কর্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। কারখানা পরিচালনার সুবিধার্থে কমিটির সদস্যগণ মিটিং করার অধিকার পাবে। কর্তৃপক্ষ ঘোষিত সকল সুযোগ সুবিধা অন্যান্য শ্রমিকদের মতো ভোগ করতে পারবে।
এক কারখানার কোন সদস্য অন্য কারখানার কমিটির সদস্য হতে পারবে না। সভার আলোচ্যসূচী পূর্ব নির্ধারিত হবে না। কমিটির শ্রমিক এবং মালিক প্রতিনিধিকে ব্যবস্থাপনা সহায়তা করবে।
গঠনপ্রণালী (Constitution)
স্বাধীনভাবে কমিটি গঠনের মাধ্যমে ব্যবসা কিংবা বাণিজ্যের উন্নয়ন অথবা কল্যানের জন্য কাজ করে যাওয়ার মাধ্যমে মালিক ও শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদী তথা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে সহায়তা করা। মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট কোন প্রকার বিভেদ, বিরোধ অথবা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও সহায়তা বিষয়সমূহ পরিহার ও মীমাংসা এবং উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে কাজের সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মধ্যস্থতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ করা।শ্রমিক অংশগ্রহণকারী কমিটি |
আরও একটি হৃদ্যতাপূর্ণ মালিক ও শ্রমিক সু-সম্পর্ক সৃষ্টি ও পরিচালনা করা। কমিটিতে মালিক এবং শ্রমিক উভয় পক্ষের প্রতিনিধি থাকতে হবে। মোট সদস্য সংখ্যা হবে ছয় এর কম ও ত্রিশ জন এর বেশী হবে না। মালিক প্রতিনিধির সংখ্যা শ্রমিক প্রতিনিধির সংখ্যার চেয়ে খুব কম হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান কমিটির সভাপতি হবেন। শ্রমিক প্রতিনিধি শ্রমিকদের দ্বারা নির্বাচিত হবে।
শ্রমিক প্রতিনিধিদের চাকুরীর বয়স কমপক্ষে ছয় মাস হতে হবে। ওয়েল ফেয়ার অফিসার কমিটিতে মালিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসাবে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। শ্রমিক প্রতিনিধিগণ তাদের মধ্য থেকে সহসভাপতি নির্বাচন করবেন। কোন প্রতিনিধির বিরুদ্ধে কোন অসদাচরনের অভিযোগ থাকতে পারবেনা। যদি থাকে তার সদস্যপদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে।
কোন প্রতিনিধি চাকুরী ত্যাগ করলে বা কমিটি হতে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি চাইলে তাহা সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচনের মাধ্যমে শুন্য পদে নতুন প্রতিনিধি পূনঃনির্বাচিত করা যেতে পারে। কমিটির মেয়াদকাল ২(দুই) বছরের বেশী হবে না। নারী ও পুরুষ কমিটিতে অংশগ্রহনে সমান সুযোগ লাভ করবে। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক/কর্মীদের স্বাধীন শ্রমিক অংশগ্রহণ কমিটির বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া সহ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। যেমনঃ
মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি থাকবে। কমিটির স্থায়ীত্বকাল ০২(দুই) বৎসরের অধিককাল হইবে না। শ্রমিক পক্ষের সদস্যের সংখ্যা মালিক পক্ষের সংখ্যার কম থাকবে না।
সুরক্ষা (Safety)
শ্রমিক এবং মালিক প্রতিনিধি যুক্তিসঙ্গত বিষয়ে একে অন্যের বক্তব্য কিংবা যুক্তিতর্কের কারণে কোন প্রকার ব্যক্তিগত স্বার্থহানি করা হবে না। কোন প্রতিনিধি যুক্তিসঙ্গত কিংবা আইন সঙ্গত বক্তব্য বা দাবী উপস্থাপনের জন্য কোন প্রকার সুবিধা হতে বঞ্চিত বা চাকুরী হারাবার ঝুঁকি থাকবেনা। অংশগ্রহণ কমিটির পদবিন্যাস করা। সদস্য সচিব মালিক পক্ষের (ওয়েল ফেয়ার) প্রতিনিধি।সাধারণ সম্পাদক মালিক পক্ষের প্রতিনিধি।সভাপতি হবেস মালিক পক্ষের প্রতিনিধি। সহ-সভাপতি শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি হবে। সহ-সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি। সদস্য সংখ্যাঃ মালিক পক্ষের প্রতিনিধি তিন জন। সদস্য সংখ্যা শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি পাঁচ জন।
অংশগ্রহণ কমিটি দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ?
অংশগ্রহণ কমিটির সদস্যগষ নিম্নোক্ত দায়িত্বসমূহ পালন করবেঃ- অংশগ্রহণ কমিটির কার্যাবলী হবে শ্রমিকদের মধ্যে চেতনার বিকাশ ঘটানো ও তার উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা এবং বিশেষত মালিক এবং শ্রমিকের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, সমঝোতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়াস। শ্রম আইনের প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ। শৃংখলাবোধ জাগ্রত করা ও নিরাপত্তা, পেশাগত স্বাস্থ্য রক্ষা এবং কাজের অবস্থার উন্নতি সাধন এবং রক্ষণ।
- বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, শ্রমিকদের শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ প্রশিক্ষণে উৎসাহ দেয়া।
- উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ, উৎপাদন ব্যায় ও জঞ্জাল হ্রাস এবং পণ্যের মান উন্নয়ন।
- শ্রমিকদের ও তাদের পরিবারবর্গের জন্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ।
প্রার্থীর যোগ্যতা
- কোম্পানীর নিয়ম নীতি সম্পর্কে সাম্যক ধারণা থাকতে হবে।
- চাকুরীর বয়স নিরবচ্ছিন্নভাবে ০৬ ছয় মাস হতে হবে ও প্রার্থীর বয়স সর্বনিম্ন ২৪ বছর ৩ মাস হতে হবে।
- কর্তৃপক্ষের সাথে শ্রমিকদের সমস্যাদি নিয়ে কথা বলার সৎ সাহস থাকতে হবে।
- নিজস্ব সেকশনে কর্মদক্ষতার সুনাম থাকতে হবে।
- কর্মক্ষেত্রে কোন অপরাধ কিংবা অপরাধের কারণে দন্ডিত নয় এমন।
- উক্ত বিভাগ বা যে কোন সেকশন থেকে অভিযোগ/ যৌক্তিক কোন বাধা না থাকলে।
কমিটির সদস্য হবার অযোগ্যতা?
গঠনতন্ত্র বা বিধিমালায় যা কিছুই অন্তভুক্ত থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি সদস্য হইতে পারবে না যদি সে, নৈতিক স্থলন জনিত অপরাধে দন্ডপ্রাপ্ত হইয়া থাকে। যদি সে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত না থাকে।কমিটির তহবিল
শ্রমিক অংশগ্রহণ কমিটি তাদের কার্যকলাপ সম্পন্ন করার জন্য কোন শ্রমিক কিংবা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর নিকট হইতে কোন প্রকার চাঁদা গ্রহণ করিতে পারবে না। কোম্পানীর প্রশাসনিক বিভাগ শ্রমিক অংশগ্রহণ কমিটির মাসিক, ত্রৈমাসিক, বাৎসরিক সভা ও নির্বাচন উপলক্ষ্যে যদি কোন তহবিলের প্রয়োজন হয় তবে সেই ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।কমিটির স্থায়িত্ব
- কমিটির যেকোন সদস্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ২৩ ধারায় কোন অভিযোগ উত্থাপিত হলে ও সন্দেহাতিতভাবে সে অপরাধ প্রমানিত হলে।
- কোন সদস্য চাকুরী ছাড়লে বা মৃত্যুজনিত কারণে।
- কোন সদস্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করিলে।
- কোন ফৌজদারী অপরাদে দন্ডপ্রাপ্ত হইলে।
কমিটির গঠনতন্ত্রের পরিবর্তনের নিয়ম?
আইনগত বিধিবদ্ধ নিয়ম ও প্রতিষ্ঠানের নিয়মের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সংরক্ষনের মাধ্যমে কমিটির গঠনতন্ত্র পরিবর্তন/সংশোধন করা যাবে। তবে সে ক্ষেত্রে কমিটির সকল সদস্যদের লিখিত মতামত থাকতে হবে। নতুন গঠনতন্ত্র চলমান কমিটির কার্যকাল হতে শুরু হবে।কল্যাণমূলক ভূমিকা
শ্রমিক অংশগ্রহণ কমিটি আইনগত বিধিবদ্ধ নিয়ম ও প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের যাবতীয় কল্যাণমূলক কাজে সহায়তা করা ও মালিক পক্ষকে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনার জন্য অবহিত করা।কমিটি বিলুপ্ত ও পূনঃগঠন পদ্ধতি?
নিম্ন লিখিত যেকোন কারণে সাময়িক বিলুপ্তি/পুনঃগঠন করার ক্ষমতা কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করবেঃ- নির্বাচিত কমিটির সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ কিংবা সংঘাতের আশংকা হলে।
- সদস্যদের নৈতিক স্থলন কিংবা আচরণে (ঘুষ, দুর্নীতি কিংবা অসততা) অধঃপতন হলে।
- সদস্যরা একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন এবং অভিযোগ সন্দেহাতিতভাবে প্রমানিত হলে।
- সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের গোপনীয় তথ্য পাচারের অভিযোগ উঠলে ও অভিযোগ সন্দেহাতিতভাবে প্রমানিত হলে।
- সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগ উঠলে ও অভিযোগ সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হলে।
- সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ক্ষতিসাধন কিংবা চুরির অভিযোগ উঠিলে ও অভিযোগ সন্দেহাতিতভাবে প্রমানিত হলে।সদস্যদের বিরুদ্ধে অসদাচরনের অভিযোগ উঠিলে ও সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হলে।
- সদস্যদের বিরুদ্ধে মহিলা শ্রমিকদের নির্যাতন কিংবা হয়রানীর অভিযোগ উঠিলে ও সন্দেহাতিতভাবে প্রমানিত হলে।
কমিটির সদস্যদের নিরাপত্তা
- কমিটির সদস্যদের স্বার্থ পরিপন্থি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ। যেমনঃ কর্মস্থল হতে বদলী, ছাটাই, কর্মচ্যুতি, অব্যাহতি, বরখাস্ত ইত্যাদি সহানুভুতি পাওয়া।
- অনভিপ্রেত কোন সমস্যার উদ্ভব হলে তাৎক্ষনিকভাবে কর্তৃপক্ষের সহিত আলোচনার ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
কমিটির কর্মপন্থা
- প্রতি দুই মাসে অন্ততঃ একবার সভার আয়োজন করা হবে।
- সভা আয়োজনের আগে কমিটির সকল সদস্যকে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।
- কমিটির সভাপতি বা সহসভাপতির সভাপতিত্বে সভার আয়োজন করা।
- জরুরী ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ সভার আয়োজন করা যেতে পারে।
- আলোচনার পূর্ব নির্ধারিত আলোচনাসূচী বাধ্যতামূলক নয়।
- সভার আলোচনার বিষয়সমূহ লিপিবদ্ধকরণ ও এর কপি শ্রম অধিদপ্তরে প্রেরণ করা।
- সভার কোরাম সম্পন্ন হওয়ার জন্য মোট সদস্যের অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিত থাকতে হবে ও কোন সদস্য পরপর তিনটি সভায় উপস্থিত না থাকলে কমিটিতে তার সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে।
- প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়সমূহ কারখানার বাহিরে কারও কাছে প্রদর্শন করা যাবে না।