রেজিন কোটিং কি | রেজিন কোটিং এর বিভিন্ন পদ্ধতি

রেজিন কোটিং কি?

পােশাকের কোন নির্দিষ্ট অংশের আকৃতি কিংবা আয়তন (Shape) ঠিক রাখার জন্য পােশাকের কাপড়ের মাঝখানে ইন্টারলাইনিং ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও উক্ত ইন্টারলাইনিংকে বিশেষ ধরনের আঠার সাহায্যে তাপ ও চাপে কাপড়ের সঙ্গে লাগিয়ে দেয়া হয়। ইন্টারলাইনিংকে কাপড়ের সাথে লাগানাের জন্য তার পৃষ্ঠদেশে আঠাজাতীয় পর্দাথের প্রলেপ দেওয়া হয়। 

রেজিন কোটিং
রেজিন কোটিং

আর এ আঠা জাতীয় বা রেজিন জাতীয় পদার্থের প্রলেপ দেওয়াকে রেজিন কোটিং বলা হয়।রেজিন হল এমন একটি পদার্থ যা অত্যধিক তাপ ও চাপে গলে যায় ও কাপড়ের সাথে ভালভাবে লেগে যায়। রেজিন কোটিং এর ফলে ইন্টারলাইনিং এ সহজে কোন ভাঁজ পড়ে না।

রেজিন কোটিং এর প্রয়ােজনীয়তা?

কাপড় হতে পােশাক তৈরির ক্ষেত্রে পােশাকের বিভিন্ন অঙ্গে ইন্টারলাইনিং জোড়া লাগানাের কাজ ও পদ্ধতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। জামার কলার কিংবা কোটের সম্মুখ অংশে সেলাই করে ইন্টারলাইনিং লাগানাে হলে ইন্টারলাইনিং কুঁচকে যেতে পারে ও সেলাই লাইন বরাবর সীম পাকার সৃষ্টি হতে পারে। 

আর এ অসুবিধা দূর করার জন্য রেজিন কোটিং এর মাধ্যমে ফিউজিবল ইন্টারলাইন ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কাপড়ের উপর থার্মোপ্লাস্টিক রেজিনের হালকা প্রলেপ দিয়ে ইন্টারলাইনিংকে জোড়া লাগানাে হয়। ওভেন, নিটেড কিংবা ফেলটেড কাপড়ের জন্য রেজিন কোটিং খুবই উপযােগী। 

রপ্তানিযােগ্য পােশাকে রেজিন কোটি দ্বারা ফিউজিং করে পােশাকের গুণগত মান অনেকাংশে বৃদ্ধি করা যায়। পােশাকশিল্পে ও দর্জির দোকানে যেখানে কোট, শার্ট ও অন্যান্য পােশাক বিশেষ করে যেক্ষেত্রে ইন্টারলাইনিং ব্যবহার করা হয়, সেক্ষেত্রে রেজিন কোটিং ব্যবহার করা হয়। 

রেজিন কোটিং এর ফলে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়ঃ
  • এক্ষেত্রে অধিক উৎপাদন হয় ও শ্রমিক কম লাগে, যার ফলে অধিক লাভজনক।
  • এর ফলে দীর্ঘদিন পােশাক ব্যবহার করলে ইন্টারলাইনিং এর গুণগত মান অক্ষুন্ন থাকে। 
  • রেজিন কোটিং এর সাহায্যে ইন্টারলাইনিং সংযুক্ত করলে পােশাকের সৌন্দর্য অনেক বৃদ্ধি পায়।
  • এটি খুবই সহজ পদ্ধতি বিধায় সহজেই ইহা প্রয়ােগ করা যায়। 
  • সেজন্য ইন্টারলাইনিং সংযোজনের ক্ষেত্রে রেজিন কোটিং এর গুরুত্ব অপরিহার্য হয়।

রেজিন কোটিং এর বিভিন্ন পদ্ধতি?

ইন্টারলাইনিং এর মূল কাপড়ের উপর রেজিনের প্রলেপ কিংবা কোটিং দিয়ে ফিউজিবল ইন্টারলাইন তৈরি করা হয়। এছাড়াও রেজিনের কোটিং এর প্রকারভেদের উপরও ইন্টারলাইনিং এর গুণাগুণের তারতম্য ঘটে থাকে।

বিভিন্নভাবে রেজিন কোটিং করা হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত কোটিংসমূহ হলঃ
  • স্ক্যাটার কোটিং (Scatter coating)
  • ড্রাই ডট কোটিং (Dry dot coating)
  • পেস্ট কোটিং (Paste coating)
  • ইমালশন কোটিং( Emulsion coating)
  • ফিল্ম কোটিং (Film coating)

স্ক্যাটার কোটিং (Scatter coating)

এ পদ্ধতিতে একটি বিশেষ ধরনের হেড দ্বারা রেজিনকে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার আকারে ইন্টারলাইনিং এর মূল কাপড়ের উপর বিক্ষিপ্তভাবে ছিটনাে হয়ে থাকে। অতঃপর তাপের দ্বারা রেজিনকে গলানাে হয় ও চাপের দ্বারা গলিত রেজিনকে ইন্টালাইনিং এর কাপড়ের সঙ্গে ভালভাবে জোড়া লাগানাে হয়।
 
স্ক্যাটার কোটিং
স্ক্যাটার কোটিং

আর যখন ইন্টারলাইনিং এর মধ্যস্থ রেজিনের তাপমাত্রা কমে যায় তখন রেজিনের প্রলেপ ইন্টারলাইনিং এর মূল কাপড়ের সাথে দৃঢ়ভাবে লেগে যায়। তাছাড়া স্ক্যাটার কোটিং পদ্ধতিতে রেজিনের কণার আয়তন ১৫০ থেকে ৪০০ মাইক্রন হয়ে থাকে। যা অন্যান্য পদ্ধতি অপেক্ষা বড় সাইজের হয়।

ড্রাই ডট কোটিং (Dry dot coating)

রেজিনের মিহি পাউডার এনগ্রেভড রােলারের সাহায্যে ডাই আকারের ইন্টালাইনিং এর মূল কাপড়ের উপর প্রিন্ট করা হয়। অতঃপর ডট প্রিন্টেড কাপড়কে ওভেনের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করানো হয়। ওভেনের তাপের ফলে রেজিন গলে যায় ও রােলারের চাপে গলিত রেজিন ইন্টারলাইনিং এর মূল কাপড়ের সাথে খুব ভালভাবে লেগে যায়। 

এবং রোলারের চাপে গলিত রেজিন ইন্টারলাইনিং এর মূল কাপড়ের সাথে ভালভাবে লেগে যায়। বিভিন্ন প্রকার রেজিনের জন্য তাপ ও চাপ বিভিন্ন হতে পারে। প্রতি সেন্টিমিটারে ডটের সংখ্যা ৩ থেকে ১২টি হতে পারে। 

ড্রাই ডটের ক্ষেত্রে রেজিনের কণার আয়তন ৮০ থেকে ২০০ মাইক্রন পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। পাতলা কাপড়ের জন্য ছােট আকারের ডট এবং মােটা কাপড়ের জন্য বড় আকারের ডট নির্ধারণ করা উচিত।

পেস্ট কোটিং (Paste coating)

এ পদ্ধতিতে মিহি রেজিন পাউডারকে পানি এবং কেমিক্যালস এর সাহায্যে পেষ্টে রূপান্তরিত করা হয়। অতঃপর ঐ পেস্টকে নির্দিষ্ট প্যাটার্নে খুবই ছােট ছােট ডট আকারে ইন্টারলাইনিং এর মূল কাপড়ের উপর প্রিন্ট করা হয়। তাপের সহায়তায়, পানি ও কেমিক্যালসকে পেষ্ট এর ডট হতে বিতাড়িত করা হয়।
ফিল্ম কোটিং
ফিল্ম কোটিং

যার ফলে রেজিনের ডট কাপড়ের সঙ্গে লেগে থাকে। পেষ্ট কোটিং এ রেজিনের কণার সাইজ ৯ থেকে ৮০ মাইক্রন পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর এ পদ্ধতিতে সবচেয়ে ছােট সাইজের ডটবিশিষ্ট রেজিনের কোটিং দেওয়া হয়।

ইমালশন কোটিং( Emulsion coating)

এ পদ্ধতিতে রেজিনের পাউডারকে পানি ও কেমিক্যালস দ্বারা ইমালশনে রূপান্তর করা হয়ে থাকে। অতঃপর ইটারলাইনিং এর মূল কাপড়কে ইমালশনের পাত্রের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করানাে হয়। যার ফলে কাপড় ইমালশন শুষে নেয়। একজোড়া স্কুইজিং রােলারের সাহায্যে অতিরিক্ত ইমালশন কাপড়ের মধ্যে হতে অপসারিত করা হয়। 

ইমালশন কোটিং
ইমালশন কোটিং

অবশেষে ইমালশনযুক্ত কাপড়কে একটি ওভেনের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করানাে হয়, যার ফলে কাপড় শুকিয়ে যায় এবং কাপড়ের মধ্যে সুন্দরভাবে রেজিনের প্রলেপ কাপড়ের উভয় দিকে লেগে যায়। আর এ ধরনের কোটিং বিশিষ্ট ইন্টারলাইনিং ফিউজিং এর পর হাতে ধরলে কিছুটা শক্ত মনে হয়।

ফিল্ম কোটিং (Film coating)

এ পদ্ধতিতে রেজিনকে তাপের সাহায্যে গলিয়ে মেশিনের সাহায্যে পতলা ফিল্ম আকারে ইন্টারলাইনিং এর মূল কাপড়ের উপর প্রলেপ দেওয়া হয়। আর পলিইথিলিন রেজিনের কোটিং সাধারণত এ পদ্ধতিতে বেশি ব্যবহার করা হয়। ফিল্ম কোটেড ইন্টারলাইনিং এর নমনীয়তা কম হয়ে থাকে।
Next Post Previous Post