টেক্সটাইল ওয়েট প্রসেসিং শিল্পে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। যেকোন ওয়েট প্রসেসিং এ প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। তবে এ কাজে যেমন তেমন পানির ব্যবহার করা যায় না। এ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত পানি অবশ্যই খরতা মুক্ত, স্বাদ ও গন্ধবিহীন স্বচ্ছ পানি হওয়া উচিত। পানিতে অসাধারণ দ্রবণশক্তি থাকায় প্রাকৃতিক পানিতে নানারকম পদার্থ মিশ্রিত থাকে। তবে এর উৎপত্তি স্থানের উপর পানির বিশুদ্ধতা অনেকাংশে নির্ভর করে। প্রাকৃতিক পানির মধ্যে বৃষ্টির পানি অপেক্ষাকৃত বিশুদ্ধ।
পানি |
কিন্তু তা সব সময় পাওয়া যায় না এবং দীর্ঘক্ষণ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। ওয়েট প্রসেসিং পদ্ধতিগুলোতে মৃদু পানি ব্যবহার না করলে প্রক্রিয়াগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে না এবং প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ, প্রক্রিয়ায় সময় ও শ্রম শক্তি প্রভৃতি বেশি লাগবে।
যার ফলে ওয়েট প্রসেসিং শিল্প লোকসানে পতিত হবে। আর তাই ওয়েট প্রসেসিং এ গুণগত মানসম্পন্ন পানির সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য পানিকে উপযুক্ত বিশোধন প্রণালীর মাধ্যমে মৃদু করা প্রয়োজন।
পানি কি?
পানি হচ্ছে এক প্রকার গন্ধহীন, বর্ণহীন ও তরল পদার্থ। ইহা হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে গঠিত হয়। দুই পরমাণু হাইড্রোজেন এবং এক পরমাণু অক্সিজেন মিলে এক অণু পানি গঠন করে থাকে।
পানির রাসায়নিক সংকেত হচ্ছে H2O। পানির হিমাঙ্ক ০ ডিগ্রি ও স্ফুটনাঙ্ক ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পানি কত প্রকার?
সাবানের সাথে বিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে পানিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়ঃ- মৃদু পানি
- খর পানি
মৃদ পানি কি?
যে পানি সাবানের সাথে সহজেই ফেনা উৎপন্ন করে তাকে মৃদু পানি বলে৷ যেমনঃ বৃষ্টির পানি, পতিত পানি ইত্যাদি।খর পানি কি?
যে পানি সাবানের সাথে সহজে ফেনা উৎপন্ন করে না তাকে খর পানি বলে৷ যেমনঃ সমুদ্রের পানি, নদীর পানি, ঝরনার পানি৷পানির খরতা কত প্রকার?
পানির খরতা দুই প্রকারঃ
- অস্থায়ী খরতা
- স্থায়ী খরতা
অস্থায়ী খরতা কি?
পানিতে ক্যালসিয়াম ম্যাগনেশিয়াম ও ফেরাস বাই কার্বনেট দ্রবীভূত থাকলে যে খরতার উদ্ভব হয় তাকে পানির অস্থায়ী খরতা বলে৷ পানির এ খরতা সহজে দূরীভূত করা যায়৷স্থায়ী খরতা কি?
পানিতে ক্যালসিযাম ম্যাহনেশিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুর ক্লোরাইড ও সালফেট দ্রবীভূত থাকলে পানির যে খরতা হয় তাকে পানির স্থায়ী খরতা বলে৷ পানির স্থায়ী খরতা সহজে দূরীভূত করা যায় না৷টেক্সটাইল ওয়েট প্রসেসিং এ খর পানি ব্যবহারের সমস্যা?
খর পানি ব্যবহারে টেক্সটাইল ওয়েট প্রসেসিং শিল্পে নিম্নলিখিত সমস্যার সৃষ্টি হয়ঃ- সাবান বা ডিটারজেন্টেন সাথে বিক্রিয়া
- স্কাওয়ারিং এর সময় কাপড়ে অদ্রবণীয় যৌগ জমা হয়
- ডাইস্টাফের সাথে বিক্রিয়া
- বয়লারের তাপ পরিবাহিতা কমে যায়
- কাপড় লালচে দাগ পড়ে
সাবান বা ডিটারজেন্টেন সাথে বিক্রিয়া
সাবান হল জৈব অ্যাসিডের সোডিয়াম (Na) বা পটাশিয়াম (K) লবণ যা স্থায়ী খর পানির ক্যালসিয়াম সালফেট (CaSO4) ম্যাগনেশিয়াম সালফেট (MgSO4) বা ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (CaCl2) ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2) এর সাথে বিক্রিয়া করে অদ্রবণীয় সাবান তৈরি করে৷ ফলে সাবানের ফেনা উৎপন্ন না হওয়ার সাবানের অপচয় হয়৷স্কাওয়ারিং এর সময় কাপড়ে অদ্রবণীয় যৌগ জমা হয়
সাবান বা ডিটারজেন্ট খর পানির সাথে বিক্রিয়া করে যে অদ্রবণীয় যৌগ উৎপন্ন করে তা স্কাওয়ারিং এর সময় কাপড়ের গাড়ে জমা হয় যা দূর করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার এর এ অদ্রবণীয় যৌগ কাপড়কে শক্ত ও অনমনীয় করে তোলা যা পরবর্তীতে অসুবিধার সৃষ্টি করে
ডাইস্টাফের সাথে বিক্রিয়া
খর পানিতে দ্রবীভূত লবণের সাথে ভাইস্টাফ বিক্রিয়া করে ফলে কিছু ডাইস্টাফ তলানিরূপে জমা হয় এবং ডাইস্টাফের অপচয় হয় ও খরচ বৃদ্ধি পায়৷ এছাড়া খর পানিতে ডাইং করলে কাপড়ের ডাইং সঠিক হবে না ও অসম শেড তৈরি হবে৷বয়লারের তাপ পরিবাহিতা কমে যায়ঃ
খর পানি ব্যবহার করলে শিল্পকারখানার বয়লারের গায়ে কঠিন অদ্রবণীয় ধাতব লবণের স্তর বা দাগ পড়ে৷ এ স্তরের তাপ পরিবাহিতা কম হওয়ার তাপ শক্তির পচয়হয়৷ এছাড়া অতিরিক্ত তাপ প্রয়োগের ফলে বয়লারের বাইরের স্তর যত তাড়াতাড়ি সম্প্রসারিত হয় ভিতরের স্তর লবণের স্তরের জন্য তত বেশি সস্প্রসারিত হতে পারে না৷ ফলে বয়লারের স্বাভাবিক কার্যকাল ও স্থায়িত্ব হ্রাস পায়৷ এমনকি এ অসম প্রসারণের ফলে বয়লার ফেটে যেতে পারে৷
কাপড় লালচে দাগ পড়ে
খর পানিতে ফেরাস বাইকার্বরেট থাকলে তা সাবানের সাথে বিক্রিয়ায় আঠালো ও লালচে বাদমি বর্ণের ফেরিক হাইড্রক্সাইড হিসেবে অধঃক্ষিপ্ত হয়৷ ফেরিক হাইড্রক্সাইডের আঠালো বাদামি অধঃক্ষেপ কাপড়ের সুতার৷ ফাঁকে অর্থাৎ ফাইবারে অধঃক্ষিপ্ত হয় বলে৷ কাপড়ে লালচে দাগ পড়ে এবং কাপড়ের ক্ষতি হয়৷ওয়েট প্রসেসিং এ ব্যবহৃত পানির গুণগত মান?
- পানি ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, প্রভৃতি ধাতুর বাইকার্বনেট ও ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর সালফেট ও ক্লোরাইড জাতীয় লবণ মুক্ত হতে হবে।
- টেক্সটাইল ওয়েট প্রসেসিং এর জন্য ব্যবহৃত অব্যশই পানি মৃদু কিংবা সফট হতে হবে।
- পানিকে অব্যশই দ্রবীভূত যৌগ পদার্থ মুক্ত হতে হবে।
- পানিকে অ্যামোনিয়া ও অ্যামোনিয়াম যৌগ মুক্ত থাকতে হবে।
- পানি অদ্রবীভূত কিয়বা ভাসমান পদার্থ মুক্ত হতে হবে।
- সাধারণ তাপমাত্রায় পানি বিশুদ্ধ, বর্ণহীন, গন্ধহীন ও স্বাদহীন তরল পদার্থ হতে হবে।
- পানি হাইড্রোজেন সালফাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড ও দ্রবীভূত অন্যান্য গ্যাসমুক্ত থাকতে হবে।
- সাধারণ তাপমাত্রায় পানি বিশুদ্ধ, বর্ণহীন, গন্ধহীন এবং স্বাদহীন তরল পদার্থ হতে হবে।
- পানি এমন বৈশিষ্ট্যের হতে হবে যা শূন্য ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বয়ফে ও একশত ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বাষ্পে পরিণত হয়।
- এবং চার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ পানির ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি হয়।