ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহারের জন্য আমদানিকৃত তুলা ও দেশীয় তুলা উভয়ই ব্যবহার পূর্বে তার গুণাবলি যাচাই করে নেয়া প্রয়োজন৷ সাধারণত বিভিন্ন দেশের তুলার গুণাগুণ বিভিন্ন হয়৷
কটন |
মূলত বিভিন্ন দেশের মাটির পার্থক্য আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর তুলার গুণাগুণের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়৷ এটা ছাড়াও সার ও কীটনাশক ব্যবহারের উপরও তুলার গুণাগুণের পরিবর্তন হয়৷ তুলা আঁশের মান নিম্নলিখিত গুণাগুণের উপর নির্ভর করেঃ
- আঁশের দৈঘ্য
- আঁশের শক্তি
- সূক্ষ্মতা
- তুলার আঁশের বর্ণ
- নমনীয়তা
- আঁশের পরিপক্বতা
- ট্রাশের পরিমাণ
আঁশের দৈর্ঘ্য
তুলা আঁশের দৈর্ঘ্যের উপর আঁশের গুণাগুণ অনেকাংশে নির্ভর করে৷ আবার আঁশের দৈর্ঘ্যের উপর প্রস্তুতকৃত সুতার গুণাগুণ নির্ভর করে থাকে৷ সাধারণত ১২ মি.মি. এর কম দৈর্ঘ্যের আঁশ দ্বারা সুতা তৈরি করা সম্ভব হয় না৷ তুলার আঁশের দৈর্ঘ্য সাধারণত ১২.৭ মি. মি থেকে ৬০ মি. মি পর্যন্ত হয়ে থাকে৷আঁশের শক্তি
আঁশের শক্তি হচ্ছে আঁশ কতটুকু টান প্রতিরোধ করে৷ তুলার আঁশের শক্তিকে প্রকাশ করা হয় টেনসাইল স্ট্রেংথ যার একক পাউন্ডস/বর্গইঞ্চি সংক্ষেপে অথবা গ্রাম টেক্স৷ আঁশের শক্তি মাত্রাতিরিক্ত কম হলে উক্ত আঁশ দ্বারা সুতা তৈরি সম্ভব হয় না৷ কম শক্তির আঁশ দ্বারা সুতা তৈরি করা হলে তৈরিকালীন সময়ে রিং ফ্রেমে সুতা ছেঁড়ার হার বৃদ্ধি পায়, উৎপাদন কম হয় এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়৷আঁশের শক্তির প্রায় ৮০% শক্তিই সুতার শক্তিতে রূপান্তরিত হয়৷ যেহেতু আঁশের শক্তি ছাড়া ভালো শক্তিসম্পন্ন সুতা তৈরি সম্ভব হয় না কাজেই সুতা তৈরিতে শক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এককথায় বলা যায় শক্তিবিহীন আঁশের অন্যসব গুণই অর্থহীন৷ নিম্নে আঁশের শক্তির রোটিং দেওয়া হলঃ
রেটিং → প্রেসলী → স্টেলোমিটার
ভল ৭৫ ৩০
গড় ৬০ ২৪
খরাপ ৪৫ ১৮
গড় ৬০ ২৪
খরাপ ৪৫ ১৮
সূক্ষ্মতা
কোন বস্তুর সূক্ষ্মতা সাধারণত তার ব্যাস বা প্রস্থচ্ছেদের সাথে সম্পর্কযুক্ত৷ তুলা আঁশের সূক্ষ্মতা তার ব্যাস এবং আঁশে উপস্থিত সেলুলোজ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়৷ সাধারণ অর্থে বলা যায় ছোট দৈর্ঘ্যের আঁশ মোটা ও লম্বা দৈর্ঘ্যের আঁশ সূক্ষ্ম অর্থাৎ চিকন হয়৷ সূক্ষ্ম আঁশ দ্বারা উচ্চ কাউন্টের এবং উচ্চ মানের সুতা তৈরি করা সম্ভব৷ সুতার প্রস্থচ্ছেদের ভিতর আঁশের সংখ্যা যত বেশি হবে সুতার শক্তি ও মান তত ভালো হবে৷কাজেই আঁশ যত সূক্ষ্ম হবে সুতার মধ্যে আঁশের সংখ্যাও তত বেশি হবে৷ তুলা আঁশের ক্ষেত্রে সূক্ষ্মতা পরিমাপের জন্য প্রতি ১ ইঞ্চি আঁশের ওজন মাইক্রো গ্রাম প্রকাশ করা হয়৷ এটাকে মাইক্রোনিয়ার ভ্যালু বলা হয়৷
[০.০০০০০১ গ্রাম =১ মাইক্রো গ্রাম]
মাইক্রোনিয়ার ভ্যালু রেটিং নিম্নে দেওয়া হলঃ
মাইক্রোনিয়ার → ভ্যালু রেটিং৩ সূক্ষ্ম
৪ মধ্যম
৫ মোটা
তুলা আঁশের রং
বিভিন্ন এলাকা বা বিভিন্ন দেশের আঁশের রং প্রকারভেদে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে৷ মিক্সিং ও ব্লেন্ডিং এর ক্ষেত্রে আঁশের রং একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ একই সুতার বিভিন্ন রঙের আঁশ থাকলে পরবর্তী ফিনিশিং প্রক্রিয়ার যেমন ডাইং প্রিন্টিং ও ফিনিশিং প্রক্রিয়ায় ভালো ফল পাওয়া যায় না৷তুলা চাষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা আবহাওয়া জলবায়ু মৃত্তিকার ধরন ও তুলার জাতের উপর ফাইবারের রং বহুলাংশে নির্ভরশীল৷ তুলা আঁশের রং সাধারণত সাদা বা সাদার কাছাকাছি ধূসর থেকে বাদমি হতে পারে৷
নমনীয়তা
নমনীয় ফাইবারের পক্ষে পাঁক ধারণ করা সহজসাধ্য৷ তুলা দ্বারা সুতা তৈরির সময় আঁশের এই গুণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা সরাসরি কাপড়ের গুণকে প্রভাবিত করতে পারে৷আবার অত্যধিক নমনীয় বা অত্যধিক অনমনীয় এর কোনটাই সুতা তৈরির জন্য কামনীয় নয়৷ উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যের জন্য কাপড়কে বার বার ভাঁজকরণেও আঁশে কোন ক্ষতি হয় না।
পরিপক্বতা
পরিপক্বতা আঁশের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ৷ সুতার গুণগতমান অনেকাংশেই নির্ভর করে আঁশের পরিপক্বতার উপর৷ আঁশ পরিপক্ব না হলে সুতা তৈরির জন্য আঁশ প্রক্রিয়াজাত করার সময় খুবই অসুবিধার সৃষ্টি হয় এবং প্রক্রিয়াগত অপদ্রব্য বেশি হয়৷সুতার অত্যধিক পরিমাণে নেপের সৃষ্টি হয় ও সুতার শক্তিও কম হয় সর্বোপরি সুতার মা৷ খারাপ হয়৷ নিম্নে ম্যাচুরিটির রেটিং দেওয়া হলঃ
ম্যাচিউরিটি ভ্যালু → রেটিং
0.80 ভালো0.75 মধ্যম
0.65 খারাপ
ট্রাশের পরিমাণ
ট্রাশ বলতে সাধারণত তুলার মধ্যে আঁশ ভিন্ন অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বা ফরেইন ম্যাটার যেমন ভাঙা পাতা মরা পাতা কুঁড়ি ধুলাবালি ময়লা বীজের টুকরা ক্ষুদ্র আঁশ নেপ ইত্যাদিকে বুঝয় এককথায় তুলায় অবস্থিত ননলিন্ট দ্রব্যকে ট্রাশ বলা হয়৷সাধারণত ০.১ ইঞ্চি বা তার চেয়ে বড় ব্যবসবিশিষ্ট দ্রব্যকে ট্রাশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷ আঁশে ট্রাশের পরিমাণ সাধারণত ১থেকে ১৫ শতাংশ৷ তুলা আঁশ অর্থাৎ বেলে ট্রাশের পরিমাণ যত কম হবে তুলা আঁশ তত ভালো গ্রেডের হবে৷