নন ওভেন কাপড় কি?
প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম ফাইবার এর বন্ডিং অথবা ইন্টালকিং অথবা উভয়ের মাধ্যমে তৈরি ছিদ্রযুক্ত টেক্সটাইল স্ট্রাকচার যা যান্ত্রিক, রাসায়নিক, তাপীয় অথবা দ্রাবক পদার্থের সাহায্যে অথবা এগুলোর সন্মেলিনের মাধ্যমে তৈরি কাপড়কে নন ওভেন কাপড় বলে৷দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নন ওভেন ইন্ডাস্ট্রিগুলো ব্যাপক প্রসার লাভ করছে কারণ এগুলোর দ্রুত উৎপাদন এবং কম উৎপাদন ব্যয়৷ নন ওভেন কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত ফাইবারগুলো হল কটন, পরিয়েস্টার, নাইলন, পলিপ্রোপাইলিন, অলিফিন, এক্রিলিক, এসিটেট এবং ভিনাইয়ন৷
যুক্তবাস্ট্রে পলিয়েস্টার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়৷ অলিফিন ও নাইলন তাদের শক্তির জন্য ব্যবহৃত হয়৷ কটন ও রেয়ন তাদের পানি গ্রহণ ক্ষমতার জন্য ব্যবহৃত হয়৷ এক্রিলিক, এসিটেট এবং ভিনাইয়ন অল্প পরিমাণে ব্যবহৃত হয়৷
নন ওভেন কাপড় |
নন ওভেন কাপড়ের বৈশিষ্ট্য কি কি?
নন ওভেন কাপড়ের বৈশিষ্ট্য সীমা ব্যাপক৷ এদের মধ্যে কয়েকটি দেওয়া হলঃ- বাহ্যিকভাবে নন ওভেন ফেব্রিক দেখতে কাগজ ও ফেল্ট এর মতো অথবা বয়ন কাপড়ের অনুরূপ৷
- এগুলো কোমল রেজিলিয়েন্স গুণসম্পন্ন, শক্তও হয়, ব্যাপক অর্থে কিছুটা নমনীয়৷
- এগুলো টিস্যু পেপারের চেয়ে কয়েকগুণ পুরু৷
- নন ওভেন আলোকনিরোধক৷
- এগুলো ছিদ্রযুক্ত ছিদ্রের পরিমাণ এমন যে অতি সামান্য বায়ু থেকে বেশি বায়ু পর্যন্ত এর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে৷
- তাদের শক্তি লো টিয়ার এবং বারস্ট স্ট্রেংথ থেকে হাই টেনসাইল স্ট্রেংথ পর্যন্ত৷
- এগুলো গুইং, হিট বন্ডিং বা সেলাই করে ফেব্রিকশেন করা যায়৷
- নন ওভেনের আয়ুষ্কাল ভাল তবে কোন কোনটির আদৌ নেই৷
- কিছু নন ওভেন উত্তরূপে ধৌত করা যায়, কিছু করা যায় না, কিছু ড্রাই ক্লিনিং করতে হয়৷
- সাধারণত শীতকালে এ কাপড় পরিধানে আরামদায়ক মনে হয়৷
- জলীয় বাস্প ধারণক্ষমতা কম৷
- নন ওভেন কাপড় ফাইবার অথবা পলিমার চিপস এর পাতলা শীট হতে পারে৷
- ফাইবার দ্বারা কাপড় তৈরিতে সাধারণত তাপ, চাপ ও আঠজাতীয় পদার্থ দ্বারা বন্ডিং করা হয়৷
- নন ওভেন কাপড়ের সদর ও পিছনের অংশ এক বা ভিন্ন হতে পারে৷
- কাপড়ের ওজন অথবা পুরুত্ব উভয় দিক দিয়ে সাধারণত নন ওভেন সম নয়৷
- নন ওভেন কাপড় তৈরির সময় ইচ্ছা অনুযায়ী রঙিন করা যায়৷
নন ওভেন কাপড়ের ইতিহাস?
অপ্রিয় হলেও বাস্তবতা এই যে নন ওভেন এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃত কোন সংজ্ঞা নেই৷ International Standard Organisation ১৯৮৮ সালে (ISO 9092 : 1988) একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন। অধিকাংশ দেশ, বিশেষ করে যে সকল দেশ নন ওভেন এর উন্নয়নের বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এখনও তারা তাদের নিজস্ব জাতীয় সংজ্ঞাকে শ্রেয় মনে করছে। যা ISO 9092 এর সংজ্ঞার চেয়ে সাধারণত ব্যাপকতা বেশি৷American Society of Testing Materials (ASTM D 1117-80) এর মতে নন ওভেন হল ফাইবারের বন্ডিং অথবা ইন্টারলকিং অথবা উভয়ের মাধ্যমে তৈরি টেক্সটাইল স্ট্রাকচার, যা যান্ত্রিক, রাসায়নিক তাপীয় অথবা দ্রাবক পদার্থের সাহায্যে অথবা এগুলোর সন্মিলনের মাধ্যমে সুসম্পন্ন করা হয়৷ আর এই সংজ্ঞাটি কাগজ, বয়নকৃত, নিটকৃত অথবা ড্রাফটটিং পদ্ধতিতে তৈরি কাপড়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়৷
উক্ত সংজ্ঞাটি যথাযথ বলে স্বীকার করা হয়নি কিন্তু এটা অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ কাপড়কে আওতাভুক্ত করেছে যা অধিকাংশ লোক নন ওভেন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বিধায় সংজ্ঞা হিসেবে পছন্দনীয়৷ কিন্তু এটা ISO 9092 বর্জন করেছে৷ নন ওভেনের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং উৎপাদন প্রতি বৎসর ১১% হারে বেড়ে চলেছে৷ নন ওভেন তৈরির প্রধান সুবিধাগুলোর একটি হল এটা সাধারণত সরাসরি কাঁচামাল থেকে ফিনিশ পণ্য পর্যন্ত অবিরাম প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে৷
আর এই কাপড় তৈরিতে মালামাল স্থানান্তরের প্রয়োজন হয় না বিধায় পরিশ্রমিক ব্যয় কম৷ সকল নন ওভেন প্রক্রিয়াকে দুই ধাপে ভাগ করা যায় ।উপযুক্ত বন্ডিং আকার দেওয়ার জন্য ফাইবারগুলোকে প্রস্তত করা এবং এদেরকে বন্ডিং প্রক্রিয়াকরণ করা৷ ফাইবার প্রক্রিয়াকরণের কয়েকটি পদ্ধতি আছে৷ উৎপন্ন কাপড়ে এদের নিজস্ব নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ পূর্বেই বলা হয়েছে নন ওভেন কাপড় তৈরির পদ্ধতি অবিরাম যাতে ফাইবার প্রক্রিয়াকরণ এবং বন্ডিং কার্যক্রম একত্রে দৃঢ়ভাবে লাগানো দুটি মেশিনে করা হয় যাদের পৃথক পৃথক বর্ণনা করা কঠিন৷
এক্ষেত্রে ফাইবার প্রস্তুতকরণ প্রক্রিয়া এবং বন্ডিং পদ্ধতির পৃথক পৃথক ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন৷ ফাইবার প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়ম হল প্রথমে ফাইবারের একটি পাতলা স্তর তৈরি করা যাকে ওয়েব বলে এবং পরবর্তীতে কয়েকটি ওয়েব একটির উপর আর একটি রেখে বাট তৈরি করা৷ বাটগুলো সরাসরি বন্ডিং প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়৷ মেশিন যখন এগুলো তৈরি হয় তখন ওয়েব ও বাট পৃথক করা কঠিন৷ তথাপি নন ওভেন প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপকে সাধারণত বাট উৎপাদন বলে৷ মূলত নন ওভেন কাপড় পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু হয় ১৯৩০ সালের গোড়ার দিকে৷ উক্ত সময়ে গুটি কয়েক কোম্পানি কটন বর্জ্য দিয়ে বন্ডেড ম্যাটেরিয়াল এর সাহায্যে এ কাপড় তৈরি করে৷
বর্তমানে যাকে আমরা নন ওভেন বলি তা বাণিজ্যিকভাবে সরাসরি ফাইবার থেকে ১ম উৎপাদন শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৪২ সালে৷ পরবর্তীতে নন ওভেন ফেব্রিকের উৎপাদন শুরু হয়৷ উৎপাদনকারী দেশসমূহ হল আমেরিকা ওয়েস্টার্ন ইউরোপ এবং জাপান৷ যুগের ক্রমান্বয়ে ধারার বিবর্তনে দিনে দিনে প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে নন ওভেন ইন্ডাস্ট্রির আরও উন্নতি সাধিত হয়৷ নন ওভেন কাপড়ের ব্যবহার ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশে শুরু হয়৷ জাপান ও ইউরোপে ব্যাপকভাবে এমনকি ইউরোপে মেডিক্যাল আইটেমে এটি প্রবেশ করে৷ এ ছাড়া নন ওভেন ইন্টারলাইনিং জিওটেক্সটাইল এরও ব্যাপক ব্যবহার সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে৷
১৯৭২ সালে ওয়েস্টার্ন ইউরোপ এ নন ওভেন ফেব্রিকের উৎপাদন ছিল ৬৩,৩০০ টন৷ পাঁচ বছর পর এর উৎপাদন ছাড়ায় দ্বিগুণ৷ ২০০০ সালে এর উৎপাদন পৌঁছে ১০,২৫,০০০ টন৷ এতে শুধু উৎপাদনই বাড়েনি বেড়েছে জনসংখ্যার কর্মসংস্থান৷ নন ওভেনের উন্নয়নের অন্যতম কারণ ডিসপোজেবল এর ব্যাপক চাহিদা মেডিক্যাল প্রোডাক্ট এর ব্যাপক ব্যবহার উৎপাদন ব্যয় কম কাপড়ের নমনীয়তা বাহ্যিক সৌন্দর্য ইত্যাদি৷ ওয়েস্টার্ন ইওরোপ এর প্রায় ১৩০টি কোম্পানি এই উৎপাদনের সাথে জড়িত৷
নিম্ন বিশ্বে উৎপাদিত নন ওভেন এর পরিমাণের তালিকা দেয়া হলঃ নন ওভেন ফেব্রিক তৈরির কোম্পানিগুলোর সংগঠন রয়েছে। যাদের কাজ হল নন ওভেন নিয়ে গবেষণা করা ও এর উন্নতির জন্য কাজ করা এবং পণ্যের মান উন্নয়ন করা৷ এরূপ বিশ্বব্যাপী দুটি সংঠন হল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৮ সালে৷ INDA এর সদস্য কোম্পানি হল বিশ্বব্যাপী প্রতিনিধিত্বকারী নন ওভেন সংগঠন৷ INDA এর সদস্য কোম্পানিগুলোর পুরু নন ওভেন এর প্রতিনিধিত্ব করে৷
EDANA ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এটি তিন দশকের বেশি সময় ধরে ইউরোপের নন ওভেন ইন্ডাস্ট্রিগুলোর উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে এবং এতে অনেক সফলও হয়েছে৷ শুধু ইউরোপে নয় নন ওভেন জগতে একটি বিশ্বস্বীকৃত প্রতিষ্ঠান৷