হানিকম্ব কাপড় কি | হানিকম্ব কাপড় কত প্রকার | হানিকম্ব ও ব্রাইটন হানিকম্ব উইভের ব্যবহার

হানিকম্ব কাপড় কি?

হানিকম্ব এর মূল বুনন ডায়মন্ড৷ মৌমাছি তার বাসার জন্য যেমনঃ ছোট ছোট খোপ তৈরি করে তেমনি এই উইভে টানা ও পড়েন সুতা বিশেষ বন্ধনীতে অংশগ্রহণ করে কাপড়ের উপরিভাগে মৌচাকের মতো ছোট ছোট অসংখ্য কোষ বা সেল তৈরি করে বলে এই উইভেক হানিকম্ব উইভ বলে৷ 

এর পৃষ্ঠদেশ যথেষ্ট অমসৃণ এবং এর পানি শোষণ ও ধারণ ক্ষমতা অত্যধিক৷ কতগুলো গর্ত ও বিশেষ ধরনের বেষ্টনীর মাধ্যমে তৈরি হয় বলে একে সেলুলার উইভও বলে৷

ব্রাইটন হানিকম্ব কি?

প্রতি রিপিটে সমান সংখ্যক টানা ও পড়েন সুতা দ্বারা তৈরিকৃত ডিজাইন যা কাপড়ের উপরিভাগে অমসৃণ পৃষ্ঠের কতকগুলো হানিকম্ব কোষ তৈরি করে তাকে ব্রাইটন হানিকম্ব বলে৷ ব্রাইটন হানিকম্ব একটি জটিল ধরনের কাপড়৷ এই কাপড়ের উভয় পার্শ্ব এক রকমের দেখায়৷ ব্রাইটন হানিকম্ব উইভ কিছুটা ডায়মন্ড বেইস৷ 

এটি সাধারণত একক ডায়াগোনাল ও ডাবল ডায়াগোনাল লাইন ক্রস করে ডিজাইনের সূত্রপাত হয়৷ পুরো ডিজাইন ডায়াগোনাল লাইনের ফাঁক ২টি বড় ও ২টি ছোট৷ স্পষ্ট ডিজাইনের সেল গঠিত হয়৷

হানিকম্ব কাপড় কত প্রকার?

এই উইভের গঠনের উপর ভিত্তি করে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
  • অর্ডিনারি হানিকম্ব
  • ব্রাইটন হানিকম্ব

অর্ডিনারি হানিকম্ব কি?

কাপড়ের উপরিভাগে খোপ ও বেষ্টনী দ্বারা পালাক্রমে একের পর এক অবস্থান করে ডায়মন্ড আকারের ছোট ছোট কোষ গঠন করে যা মোমাছির তৈরি মৌচাকের মতো দেখায় তাকে অর্ডিনারি হানিকম্ব বলে৷ 

আর এই কাপড়ের উপরিভাগ অমসৃণ হয় ও কাপড়ের উভয় পার্শ্ব একই রকম দেখায়৷

অর্ডিনারি হানিকম্ব
অর্ডিনারি হানিকম্ব

অর্ডিনারি হানিকম্ব এর বৈশিষ্ট্য?

  • এর উইভ ডাময়ন্ড এর উপর করে তৈরি হয়৷
  • রিপিটে টানা ও পড়েন সুতার সংখ্যা সমান ও অসমান উভয়ই হতে পারে৷
  • সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্রতম ডিজাইন (৬×৪) তাছাড়া রিপিট সর্বদাভ ২ এর গুণিতক৷
  • কাপড়ের উপরিভাগ অমসৃণ হয়৷
  • প্রতিটি রিটিটের মধ্যে একটি করে কোষ গঠিত হয়৷
  • এই উইভের পানি ধারণক্ষমতা অনেক বেশি৷
  • ড্রাফটিং সর্বদাই v ড্রাফট অর্থাৎ পয়েন্ডেড ড্রাফট৷
  • ইন্টালেসিংসমূহ প্লেইন এর মতো হয়ে থাকে৷
  • কাপড়ের উভয় পার্শ্বে একই রকম ইফেক্ট তৈরি হয়৷

অর্ডিনারি হানিকম্ব এর গঠনপ্রণালি?

প্রথমে ডিজাইনটির রিপিট সাইজ নির্দিষ্ট করতে হবে৷ অতঃপর একটি Z টুইল বামপার্শের নিচের কর্নার থেকে 1/x অঙ্কন করতে হবে৷ এখানে x দ্বারা সুতার পড়েন ভাসা বুঝানো হয়েছে৷ এখন বামপার্শ্বের উপরের কর্নার থেকে এক ঘর নিচে অথবা এক ঘর উপর থেকে S টুইল অঙ্গন করতে হবে৷ উভয় টুইল রেখা মাঝামাঝি অবস্থানে একটি ঘরে ছেদ করবে এবং দুইটি ডায়মন্ড উৎপাদন করবে৷

উৎপাদন ২টি ডায়মন্ডের একটি টানা ভাসা ডায়মন্ড ও অপরটি পড়েন ভাসা ডায়মন্ড হবে৷ অর্থাৎ একটির ঘরগুলো পূর্ণ করা হয় ও অন্যটি খালি রাখা হয়৷ আর এভাবে অর্ডিনারি হানিকম্ব ডিজাইনটি তৈরি করা হয়৷ তবে যদি বড় ডিজাইন হয় তবে ২ সারি বন্ধনী তৈরি করতে হবে৷ 

অর্থাৎ বামপার্শ্বের নিচের কর্নার থেকে টুইলের পরিবর্তে টুইল ও প্রদত্ত টুইলের পরিবর্তে অনুরূপ টুইল তৈরি করে ডিজাইন পূর্ণ করতে হবে৷ এর ড্রফটিং সাধারণত পয়েন্টেড হয়ে থাকে৷

ব্রাইটন হানিকম্ব
ব্রাইটন হানিকম্ব

ব্রাইটন হানিকম্বের বৈশিষ্ট্য?

  • ব্রাইটন হানিকম্ব ডায়মন্ড এর উপর নির্ভর করে তৈরি হয়৷ একটি রিপিটে সাধারণত ২টি পূর্ণ ডায়মন্ড ও ৪টি অর্ধেক টানা ভাসা ডায়মন্ড তৈরি হয়৷
  • রিপিটে টানা সুতার সংখ্যা সাধারণত সমান থাকে৷ তবে রিপিট সাইজ প্রধানত চার এর গুণিতক হয়ে থাকে৷
  • সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্রতম ডিজাইন (৮×৮)৷
  • রিপিটের মধ্যে ৪টি ওয়ার্প ডায়মন্ড ও ৪টি ওয়েফট ডায়মন্ড গঠিত হয়৷
  • কাপড়ের উভয় পার্শ্ব একই রকম দেখায়৷
  • অর্ডিনারি হানিকম্বের মতো কাপড়ের উপরিভাগ অমসৃণ৷
  • তুলনামূলক উৎপাদন খরচ বেশি৷
  • ড্রাফটিং সাধারণত স্ট্রেইট ড্রাফটের হয়৷

ব্রাইটন হানিকম্বের গঠনপ্রণালি?

প্রথমে ডিজাইনটির রিপিট সাইজ নির্দিষ্ট করতে হবে৷
অতঃপর একটি টুইল বামপার্শ্বের নিচের কর্নার থেকে অঙ্কন করতে হবে৷ এখানে দ্বারা সুতার পড়েন ভাসা বুঝানো হয়েছে৷
এখন বামপার্শ্বের উপরের কর্নার থেকে এক ঘর নিচে এবং এক ঘর ডানে একটি ২ সারি বন্ধনী S টুইল দিতে হবে যা টুইলের সাথে মাঝামাঝি অবস্থানে ২ টি ঘরে ছেদ করবে৷

এখন দুই সারি বন্ধনীর উপর চারটি পয়েন্ট চিহ্নিত করতে হবে যেগুলো ২টি টুইল রেখার ক্রসিং বিন্দুর সবচেয়ে নিকটতম হবে৷ এই বিন্দুগুলোর থেকে পড়েন বরাবর হানিকম্ব ডিজাইনের উৎপাদিত ডায়মন্ডের সর্বোচ্চ সুতা ভাসার সমান টানা ভাসা চিহ্নিত করতে হবে৷ ডায়মন্ডের সর্বোচ্চ সুতা ভাসার সংখ্যা রিপিটের টানা বা পড়েন সুতার অর্ধেকের চেয়ে এক কম হবে৷

উদাহরণঃ১৬×১৬ রিপিট সাইজের সর্বোচ্চ সুতা ভাসার সংখ্যা৷ এভাবে প্রতিটি টানা ভাসা পূর্ণাঙ্গ ডায়মন্ড গঠন করতে হবে৷
এভাবে হানিকম্ব ডায়মন্ড ডিজাইন গঠিত হয়৷ উল্লেখ্য রিপিট ২ টি পূর্ণাঙ্গ ডায়মন্ড ও  ৪টি অর্ধেক ডায়মন্ড উৎপন্ন হবে।

হানিকম্ব ও ব্রাইটন হানিকম্বের পার্থক্য?


হানিকম্বঃ

  • রিপিট আকার টানা ও পড়েন সংখ্যা সর্বদা ২ এর গুণিতক হবে। যেমনঃ ৬×৪,৮×৮,১০×১০
  • ক্ষুদ্রতম রিপিটের আকার (৬×৪)৷
  • রিপিটের মধ্যে একটি ওয়ার্প ও একটি ওয়েফট ডায়মন্ড থাকবে৷
  • রিপিটের সেলগুলো উভয় দিকে দেখতে একই রকম
  • ড্রাফটিং সাধারণত অর্থাৎ পয়েন্টেড৷
  • উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অনেক কম৷
  • অর্ডিনারি হানিকম্ব কাপড়ের উভয়পার্শ্বে দেখতে একই রকম৷
  • ট্যাপেট লুমেও বুনন সম্ভব৷
  • তুলনামূলক ডিজাইন কাপড়ের উপরিভাগ অমসৃণ হয়৷

ব্রাইটন হানিকম্বঃ

  • রিপিট আকারে টানা ও পড়েন সংখ্যা সর্বদা ৪ এর গুণিতক হবে যেমন ৮×৮ ১২×১২,১৬×১৬,২০×২০ ইত্যাদি৷
  • ক্ষুদ্রতম রিপিটের আকার (৮×৮)৷
  • রিপিটের মধ্যে ৪ টি ওয়ার্প ও ৪ টি ওয়েফট ডায়মন্ড থাকবে৷
  • রিপিটের সেলগুলো একদিকে স্পষ্ট ও অন্যদিকে অস্পষ্ট অর্থাৎ উভয় দিকে এক রকম নয়৷
  • ডাফটিং সাধারণত স্ট্রেইট ড্রাফট৷
  • উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি৷
  • ব্রাইটন হানিকম্বের উভয় পার্শ্ব দেখতে একই রকম নয় কাপড়ের উপরিভাগে খুবই স্পষ্ট এবং পরিষ্কার৷
  • কিছু কিছু ডিজাইন বুননের জন্য ডবি লুমের প্রয়োজন হয়৷
  • কাপড়ের উপরিভাগে তুলনায় কাপড়ের নিচের ভাগ বেশি অমসৃণ হয়৷

হানিকম্ব ও ব্রাইটন হানিকম্ব উইভের ব্যবহার?


হানিকম্বঃ

  • যেহেতু পানি ধারণক্ষমতা বেশি কাজেই হ্যান্ড টাওয়েল, গ্লাস ক্লথ, রোলার টাওয়েল, বাথ ম্যাট ইত্যাদিতে ব্যাপভাবে ব্যবহৃত হয়।
  • ফার্নিশিং কাপড় তৈরিতে এই কাপড় ব্যবহার করা হয়৷
  • কম্বল, গৃহসজ্জা সামগ্রী ইত্যাদি তৈরিতে৷
  • রোলার টাওয়েল, বাথ ম্যাট, গ্লাস ক্লথ ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়৷
  • চিকন সুতা দ্বারা তৈরি কাপড় পোশাক তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়৷

ব্রাইটন হানিকম্বঃ

  • অধিক অলংকৃত কাপড় যেমনঃ কম্বল এবং ব্রোকেট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়৷
  • হ্যান্ড টাওয়েল গ্লাস এবং রোলার টাওয়েল হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ 
  • ক্রোকারিজ টাওয়েল হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷
Textile BD

Founder and Editor of Textile BD. He is a Textile Blogger & Entrepreneur. He is working as a textile job in Bangladeshi companies.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন