শ্রমিক সংঘ কি?
শ্রমিক সংঘ হল শ্রমিকদের স্বেচ্ছাকৃতভাবে গঠিত একটি সংগঠন। যা তাদের আর্থিক উন্নতি, চাকরির নিরাপত্তা, কার্য শর্ত ও কার্য পরিবেশ উন্নয়ন এবং সামাজিক বৃদ্ধিকল্পে মালিকপক্ষ বা ব্যবস্থাপনার সাথে দরকষাকষিতে লিপ্ত হয় এবং নানাবিধ চুক্তিনামা করে থাকে।শ্রমিক সংঘ কাকে বলে?
মালিক বা ব্যবস্থাপকের বিপক্ষে স্বীয় স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য শ্রমিকরা সম্মিলিতভাবে যে সংঘ গঠন করে তাকে শ্রমিক সংঘ বলে।শ্রমিক সংঘের সূত্রপাত কিভাবে ঘটে?
উৎপাদন ব্যবস্থার অন্যতম হাতিয়ার ও চালিকা শক্তি হল শ্রমিক। শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শিল্প কারখানায় উৎপাদন করে। কিন্তু এই শ্রমিকরা অধিকাংশ সময়ই মালিকের নিকট নিগৃহীত, অবহেলিত ও বঞ্চনার শিকার হয়। মালিকের শক্তি ও সামর্থ্যের নিকট দরিদ্র, অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত শ্রমিকরা অসহায় অবস্থায় কাজ করতে বাধ্য হয়।শ্রমিক সংঘ |
তবে এধরনের পরিস্থিতিতে নিজের শক্তি বৃদ্ধি ও স্বার্থ রক্ষার্থে এবং নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায় করার জন্য মালিকের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে সংঘবদ্ধ হয়। আর এভাবেই সূত্রপাত ঘটে শ্রমিক সংঘের।
শ্রমিক সংঘের উদ্দেশ্য?
শ্রমিক সংঘ শ্রমিকদের একমাত্র মুখপাত্র। আর এর উদ্দেশ্য হল শ্রমিকদের মালিক পক্ষের নিকট হতে রক্ষা করা এবং তাদের আর্থসামাজিক, মনস্তান্তিক দিক সমুন্নত রাখা। নিচে শ্রমিক সংঘের উদ্দেশ্যাবলী দেওয়া হলঃ- দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও জীবনযাত্রার মানের সাথে সঙ্গতি রেখে শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত মজুরি ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধার ব্যবস্থা করা।
- এবং এর মাধ্যমে তাদের উন্নত আত্মমর্যাদা দান করা। ব্যবস্থাপকের স্বজনপ্রীতি ও অসদাচরণ রোধ করা।
- শ্রমিকদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া, বর্তমানের নিরাপত্তা হিসেবে জীবিকার উৎসটিকে নিরাপদ করতে গিয়ে ভয়-ভীতি, অন্যায় আচরণ, বঞ্চনা, চাকরিচ্যুতি, অর্থনৈতিক মন্দা প্রভৃতি হতে বাঁচানোর ব্যবস্থা করা।
- এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা যেমনঃ পেনশন, ভবিষ্যৎ তহবিল প্রভৃতি আর্থিক সুবিধার ব্যবস্থা করা।
- প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করা এবং উত্তম মানবীয় সম্পর্কের পরিবেশ সৃষ্টি করা।
- শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে মালিকপক্ষ বা ব্যবস্থাপনার সাথে দরকষাকষিতে লিপ্ত হওয়া
- শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উত্তম শিল্প সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা।
- শ্রমিকদের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি করা।
- শ্রমিকদের আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
- ব্যবস্থাপনার ওপর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা অর্জন করা।
- সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করে শ্রমিকদের স্বার্থের অনুকূল আইন প্রণয়ন করা।
শ্রমিক সংঘের কার্যবলি?
শ্রমিক সংঘের মূল কাজ হল শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ, কল্যাণ সাধন ও দরকষাকষিতে শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে কাজের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।শ্রমিক সংঘের প্রকারভেদ?
শ্রমিক সংঘের কাজকে চারটি প্রধান শিরোনামে ভাগ করা যেতে পারেঃ- সদস্যদের সম্পর্কিত কাজ
- সংগঠন সম্পর্কিত কাজ
- ইউনিয়ন সম্পর্কিত কাজ
- সামাজিক সম্পর্কিত কাজ
শ্রমিক সংঘ সদস্যদের সম্পর্কিত কাজ
- কর্মীদেরকে সকল প্রকার শোষণ থেকে মুক্ত করা।
- নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত, সুষ্ঠু কার্যশর্ত ও কাজের পরিবেশের ব্যবস্থা করা।
- ব্যবস্থাপকের রোষানল ও অসৎ শ্রমিক আচরণ থেকে সদস্যদের রক্ষা করা।
- কর্মীদের বেতন, মজুরি ভাতাদি বৃদ্ধির জন্য চাপ সৃষ্টি করা।
- কর্মীদের অসন্তোষ দূর করা এবং অভিযোগ প্রক্রিয়া চালুর ব্যবস্থা করা।
- সামাজিক ন্যায়বিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করা।
- সমাজে ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যদের মর্যাদা উন্নত করা।
- শিল্প বিরোধ দেখা দিলে তা আলাপ-আলোচনা, যৌথ পরামর্শ, যৌথ দরকষাকষি ও স্বেচ্ছা মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির ওপর জোর দেয়া।
শিল্প প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কাজ
- সংগঠনের আদর্শ ও আচরণবিধি মেনে চলা।
- ব্যবস্থাপনার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা করা।
- উৎপাদন বৃদ্ধি ও গুণগত মান উন্নয়নে সচেষ্ট হওয়া।
- শৃঙ্খলা বিধানে সাহায্য করা।
- কর্মীদের ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং শ্রমিক ও ব্যবস্থাপকের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
শ্রমিক সংগঠন সম্পর্কিত কাজ
- নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা অর্জনের সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা
- ট্রেড ইউনিয়ন গনতন্ত্র সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা।
- অন্তঃ এবং আন্ত উন্নয়নে বিরোধ হ্রাস করা।
- শ্রমিক সংঘের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন করা।
- অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।
সমাজ সম্পর্কিত কাজ
- জাতীয় উন্নয়নের নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গঠনমূলক সহযোগিতা প্রদান করা।
- সমাজ থেকে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, পক্ষপাতিত্ব, আঞ্চলিকতার প্রভাব, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, সাম্প্রদায়িকতা প্রভৃতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
- জাতীয় সংহতি রক্ষা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা, বনায়ন প্রভৃতি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা।
বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শ্রমিকসংঘ?
- বাংলাদেশ ডাক ও বন্দর শ্রমিক সংঘ
- বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংঘ
- বাংলাদেশ নির্মাণ ও প্রকৌল শ্রমিকসংঘ
- বাংলাদেশ প্রেস শ্রমিক সংঘ
- বাংলাদেশ চটকল শ্রমিক সংঘ
- বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক সংঘ
- বাংলা শ্রমিক ফেডারেশন
- ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র
- বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগ
- স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন
- জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন
- শ্রমিক মজদূর ফেডারেশন
- বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন
- বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন