সিসাল ফাইবার | সিসাল ফাইবার এর ইতিহাস | সিসাল ফাইবারের ব্যবহার

সিসাল ফাইবার কি?

সিসাল এক ধরনের ফাইবার বা তন্তু যা “ক্যাকটাস” গাছের মত এক প্রকার গাছের পাতা থেকে সংগ্রহ করা হয়। এই গাছ জাকার্তা, ব্রাজিল, মধ্য আমেরিকা, আফ্রিকা, পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ও ফ্লোরিডায় জন্মে। এ গাছের পাতা গুলো সোজা অনেকটা তলোয়ারের মতো দেখায়। সিসাল ফাইবারের রং হলুদে হয়। 

ফাইবারটি নানা ধরনের পণ্য তৈরিতে ব্যবহার হয়। উন্নতমানের দড়ি, কাছি তৈরির জন্য সিসাল ফাইবার উপযোগী। তবে তা জাহাজের দড়ি হিসেবে ব্যবহার না করা শ্রেয়। কারণ হল লবন পানি সিসাল আঁশের ক্ষতি সাধন করে থাকে। তাই অনেক ক্ষেত্রে ঘোড়ার লেজের পশমের বিকল্প হিসেবে এই ফাইবার ব্যবহার করা হয়। 

হেম্প এর সাথে মিশ্রিত করে সিসাল দ্রব্যাদি ও  প্রস্তুত করা যায়। সিসাল হল একটি প্রাকৃতিক ফাইবার। এই ফাইবারকে লিফ ফাইবার ও বলা হয়। একে কখনও কখনও “সিসাল শণ” হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

সিসাল ফাইবার ইতিহাস?

প্রাচীন মেক্সিকান (Maxican) এর অ্যাজটেক(Aztec) সম্প্রদায় পরিধানের জন্য সিসাল নামক আঁশ থেকে তৈরি কাপড় ব্যবহার করত। যা একধরনের গাছের পাতা থেকে সংগৃহীত করা হত। গাছটি মধ্য আমেরিকার স্বকীয় মেক্সিকো উপসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত ইউকাটন শহরের সিসাল বন্দরের নাম অনুসারে এই আঁশটির নাম হয় সিসাল। 

সিসাল এর বৈজ্ঞানিক নাম?

সিসাল এর বৈজ্ঞানিক নাম হল Agave sisalana এছাড়াও সিসাল এর প্রজাতি নাম হল আ. সিসালা।

সিসাল ফাইবারের গুণাগুণ?

  • সিসাল ফাইবার খুবই মসৃণ হয়।
  • এই ফাইবারগুলো সোজা থাকে।
  •  সাধারণত সিসাল ফাইবারের রং হলুদ হয়ে থাকে।
  • এই ফাইবার লবণাক্ত পানিতে টিকতে পারে না।

সিসাল ফাইবার
সিসাল ফাইবার

সিসাল ফাইবারের ব্যবহার?

  • ভাল মানের দড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
  • জুতার ব্রাশ তৈরিতে ব্যবহার হয়।
  • ভালো মানের ব্রাশ তৈরিতে সিসাল ফাইবার ব্যবহার করা হয়।
  • ঘোড়ার লেজের পশমের বিকল্প হিসেবে সিসাল ফাইবার ব্যবহার করা হয়।

সিসাল ফাইবারের উপাদান?

  • সেলুলোজ= ৭১%
  • হেমি সেলুলোজ= ১৮%
  • লিগনিন= ৬%
  • পেকটিন= ২.৩%
  • ফ্যাট এন্ড ওয়াক্স= ০.৫%
  • লিকুইড পদার্থ= ১.৭%

সিসাল গাছের বর্ণনা?

সিসাল গাছ আগাভা সিসালানা তলোয়ার আকৃতির। লম্বা পাতা দৈর্ঘ্য ১.৫ থেকে ২ মিটার হয়। এছাড়াও এ গাছ ৪.৯ থেকে ৬.৬ ফুট নকশাকৃত থাকে। কচি পাতার কিনার ধরে অনেক দাঁতের মত আছে। কিন্তু পরিপক্ক হলে এগুলো হারিয়ে যেতে পারে। একটি সিসাল উদ্ভিদ ৭ থেকে ১০ বছরের জীবন লাভ করে।

সাধারণত বাণিজ্যিকভাবে প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ৪০০ টি পাতার উৎপাদন করা হয়। প্রতিটি গাছের পাতা থেকে প্রায় ১০০০ তন্তু গড়ে ওঠে। সিসাল গাছের ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ও রোদে উৎপাদন ভাল হয়। সিসালকে ক্রান্তীয় ও উপ-ক্রান্তীয় হিসাবে গণ্য করা হয়।

সিসাল চাষ পদ্ধতি?

সিসাল গাছের ৬ থেকে ৭ বছর বয়সে ফুল আসে। ফুল ফোটার সময় গাছের উচ্চতা ২০ ফুট এর মত হয়ে থাকো। ফুল যখন ঝড়ে যায় তখন ঝড়ে যাওয়া ফুলের বোঁটায় ছোট ছোট অংকুর দেখা যায়। যা পরে ছোট চারা গাছে পরিণত হয়ে থাকে। আর এই চারা গুলো এক সময় মাটিতে ঝড়ে পড়ে মাটিতে গাছ জন্মায় ও পরে মাতৃ গাছটি মারা যায়। চারা গাছ প্রয়োজনে অন্য স্থানে নিয়ে রোপণ করা যায়। সিসাল গাছ প্রায় ভূমি সমতল থেকে শুরু করে সারা জীবনে প্রচুর পরিমাণে পাতা দিয়ে থাকে। 

গাছের বয়স আড়াই থেকে ৪ বছর বয়স পযন্ত পাতা সংগ্রহ শুরু হয়। এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর গাছ মারা না যাওয়া পর্যন্ত পাতা পাওয়া যায়। একটি ভাল সিসাল গাছ সারা জীবনে ৪০০ এর মত পাতা দেয়া  এবং প্রতি পাতায় প্রায় ১০০০ আঁশ থাকে। পরিপক্ক পাতা কেটে মেশিন দ্বারা আঁশ থেকে জলীয় পদার্থ দ্বারা আলাদা করা হয়।পরে তা ধুয়ে রোদে শুকানো হয়।
Next Post Previous Post