যেকোন সেক্টরে সহজে চাকুরী পাওয়ার জন্য সেই সেক্টর সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর, আপনি যদি সঠিকভাবে ইন্টারভিউ দিতে না পারেন। তবে আপনার সমস্ত পরিশ্রম বৃথা যাবে। তাই যেকোন সেক্টরে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করে দেখতে পারেন।
চাকুরির ইন্টারভিউ |
লক্ষ্য যদি থাকে বড় কোম্পানিতে চাকুরী করার?
আপনি যদি বড় কোন কোম্পানিতে চাকরি করতে চান তবে, আপনার টার্গেট থাকবে ছোট ছোট কোম্পানি গুলোতে ইন্টারভিউ দিয়ে প্রাকটিস করে নেওয়া।
আর ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রাকটিস করার আগেই বড় প্রতিষ্ঠান গুলাতে ইন্টারভিউের জন্য ডাক আসলে, কোন টিচার, ফ্রেন্ড বা আপনার আম্মাকে, টেবিলের এক পাশে বসিয়ে, একটা প্রশ্নের তালিকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে, একটার পর একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে বলবেন। উত্তর দিতে গেলে বুঝতে পারবেন। আপনার প্রস্তুতি শতকরা কত ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
আপনি যেগুলার উত্তর ১০০% জানেন, সেগুলোই বলতে গেলে, ওয়ার্ড খুঁজে পাচ্ছেন না। আমতা আমতা বা ভয় কাজ করতে করতে সোজা জিনিসটা তালগোল পাকিয়ে ফেলবেন। তাই উত্তর জানার চাইতে, উত্তর বলতে পারার কোয়ালিটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই উত্তর লিখে লিখে বলার অনুশীলন করার পর আবার আপনার আম্মুা বা ফ্রেন্ডকে বলবেন ইন্টারভিউ নিতে।
প্রশ্ন বুঝে সঠিক উত্তর দেওয়া কৌশল?
আপনি যখন উত্তর রেডি করবেন। তখন উত্তর গুলোর দুইটা ভার্সন করবেন। প্রথম ভার্সন হচ্ছে এক মিনিটের উত্তর। যেমন হলঃ ধর, মার, কাট টাইপের। একদম টু দ্যা পয়েন্টে।কারণ কিছু পরীক্ষক, জাস্ট টু দ্যা পয়েন্টে উত্তর শুনতে অনেক বেশি পছন্দ করেন। আপনি গরুর রচনা বলতে শুরু করলেন এতে করে পরীক্ষক অনেক সময় বিরক্ত হয়। কারণ হল তারা বোরর্ট নয়, আপনার টু দ্যা পয়েন্ট উত্তরগুলো শুনতে পরীক্ষক অনেক বেশি খুশি হয়।
যদিও মাথা নাড়ায় তবে মনে মনে কিন্তু গালি দিতে থাকে। এই গাধায় এতো প্যাঁচায় কেন! আর আরেকটা ভার্সন থাকবে, তিন মিনিটের উত্তর। আপনার আম্মাকে শিখিয়ে দিবেন, একটা উত্তর শেষ হলে আরেকটু সেই প্রশ্নের উত্তরের বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য।
এখন প্রশ্ন হল মূল ইন্টারভিউ এর সময় এক মিনিটের না তিন মিনিটের উত্তর দিবেন কিভাবে। সেটা বোঝার দুইটা টেকনিক আছে। প্রথমে এক মিনিটের উত্তর দিয়ে বলবেন, আপনি যদি চান, আমি এটি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত বলতে পারব, তখন সে আগ্রহী হলে আপনাকে ডিটেল বলতে বলবে আর না হইলে বলবে না।
অথবা তার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে বুঝতে হবে যে সে আপনার উত্তরে স্যাটিসফাইড হয়েছে কি না। নাকি আরো এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চায়। আর সবচেয়ে খারাপ হয়, আপনি যখন বক বক করে যাচ্ছেন, আর পরীক্ষকের অবস্থার দিকে খেয়াল করতেছেন না। শেষমেশ ওনি আপনাকে থামিয়ে অন্য প্রশ্ন করা শুরু করছে।
জাস্ট রিলাক্স হন?
যে কোম্পানিকে ইন্টারভিউ দিতে যাবেন সেই কোম্পানির কোন ড্রেস কোড আছে কিনা, আগে থেকে জেনে নিবেন। না থাকলেও ফর্মাল ড্রেস পরে যাওয়া অনেক ভাল। পকেটে মোবাইল, চাবি, পয়সা ও কোন কিছু রাখা যাবে না।শুধু একটা কলম রাখবেন। মোবাইল থাকলে সাইলেন্ট করে রাখবেন। আর ব্যাগের মধ্যে এক্সট্রা কলম, পেন্সিল, কয়েক কপি বায়োডাটা, কাজের স্যাম্পল রাখবেন। যদি প্রয়োজন হয় তবে বের করে কাজ সারতে পারবেন।
সঠিক সময়ে উপস্থিত থাকা?
অবশ্যই নিদিষ্ট সময়ের ১৫-২০ মিনিট আগে চলে যাবেন। পারলে আগের দিন ইন্টারভিউ এবং গাড়ি পার্কিং করার জায়গা দেখে আসতে পারেন। যাতে ইন্টারভিউ এর আগে কোন সমস্যা বা সময়ের অপচয় না হয়।আর কোন কারণে বেশি আগে পৌঁছে গেলে আশেপাশের কোন রেস্টুরেন্টে বা হোটেলে অপেক্ষা করে, ১৫-২০ মিনিট আগে জায়গা মতো পৌঁছে যাবেন। বাসা থেকে বের হবার আগে অবশ্যই ওই কোম্পানির ফোন নাম্বার মোবাইলে সেভ করে নিবেন।
কোন কারণে দেরী হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আগে থেকে ফোন করে জানিয়ে দিবেন। এবং কতক্ষণ দেরী হতে পারে সেটা হালকা একটু সময় বাড়িয়ে বেশি করে বলবেন, যাতে দুই বার বলা না লাগে। ইন্টারভিউ এর ১৫ মিনিট আগ থেকে কিছু পড়বেন না বা রিভাইজ দিতে যাবেন না।
এই সময়টাতে রিলাক্স করেন বা ভাল লাগে এমন কিছু মোবাইলে দেখেন। মোটা বিশাল বই থেকে ১৫ মিনিটে পড়ে সবকিছু শেষ করতে পারবেন না। বই পড়ার ইচ্ছা থাকলে সেটা আগে পড়ে আসবেন।
কে কে থাকবে আপনার ইন্টারভিউতে?
আপনার ইন্টারভিউতে কে কে থাকবে, জানতে পারলে, তাদের পজিশন, জব রেসপনসিবিলিটি, এক্সপেরিয়েন্স ইত্যাদি জানার চেষ্টা করবেন।এমনকি উনাদের যদি কোন ব্লগ বা ওয়েবসাইট থাকে সেখান থেকে উনাদের সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। linkedIn এর প্রোফাইল ঘাটাঘাটি করে তাদের সম্পর্কে জানতে পারেন।
ওই কোম্পানিতে এবং যে ডিপার্টমেন্টের জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, সেই ডিপার্টমেন্টের কাজ সম্পর্কে ভাল ভাবে ধারণা নিয়ে যাবেন। না জানলে আপনি ওই কোম্পানির কোন সিনিয়র বা সরাসরি রিসিপশনে ফোন দিয়ে জেনে নিতে পারেন।
আপনার সিভিতে আগের যত চাকরি বা প্রজেক্ট বা কোর্সের নাম আছে, প্রত্যেকটা সম্পর্কে চারটা জিনিস আগে থেকে ঠিক করে লিখে, মুখস্থ করে যাবেন।
ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় যে সমস্যা গুলো সচারাচর হয়?
আপনার সিভিতে আগের যত চাকরি বা প্রজেক্ট বা কোর্সের নাম আছে, প্রত্যেকটা সম্পর্কে চারটা জিনিস আগে থেকে ঠিক করে লিখে, মুখস্থ করে যাবেন। কারণ হল সেগুলা হচ্ছে আপনি কি সমস্যা সমাধান করছেন, আপনি কি কি Action নিয়েছেন বা কাজ করছেন, কি Result আসছে বা কি শিখছেন এবং Future আবার করা লাগলে কোন কোন জিনিস অন্যভাবে করবেন।
সংক্ষেপে মনে রাখার জন্য কিছু টেকনিক শর্টকাট করে রাখবেন আর বলার সময় সিরিয়াল ধরে বলে দিবেন দেড় থেকে দুই মিনিটের মধ্যে।
জেনে নিন আপনি কোন পজিশনের জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন?
আপনি যে পজিশনের জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন তা একটা জব ডেসক্রিপশনে যত সফটওয়্যার, স্কিল বা কিওয়ার্ড আছে সেগুলা না জানলেও, গুগল করে, উইকিপিডিয়া, ইউটিউবে ভিডিও দেখে অথবা কোন সিনিয়র/টিচারকে জিজ্ঞাসা করে মোটামুটি একটা ধারণা নিয়ে যাবেন।আর যদি কারও সহায়তা না পান, তবে যে কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিবেন সেই কোম্পানিকেই সরাসরি ফোন দিতে পারেন।
উনাদেরকে ফোন করলে, ওরা বুঝে ফেলবে আপনি আসলেই জব এর জন্য খুব আগ্রহী। আর ইন্টারভিউতে ওগুলা নিয়ে প্রশ্ন করে বসলে, আপনি বোবার মতো বসে না থেকে কিছু একটা বলতে পারবেন।
আপনার সিভিতে যা যা লিখা আছে, সেগুলি এক থেকে দুই বছরের পুরানো হতে পারে। প্রজেক্ট, সফটওয়্যার যাই থাকুক না আগের হোক না কেন, সবগুলা সম্পর্কে PARF (Problem, Action, Result, Future) করে যাবেন। এমন যাতে না হয় যে অনেক আগে করেছিলাম এখন ভুলে গেছি। তাইলে কিন্তু চটকনা খাবেন ইন্টারভিউ গিয়ে।
সিভির সমস্যার সমাধান করা?
আপনার সিভিতে যা যা লিখা আছে, সেগুলি এক থেকে দুই বছরের পুরানো হতে পারে। প্রজেক্ট, সফটওয়্যার যাই থাকুক না আগের হোক না কেন, সবগুলা সম্পর্কে PARF (Problem, Action, Result, Future) করে যাবেন। এমন যাতে না হয় যে অনেক আগে করেছিলাম এখন ভুলে গেছি। তাইলে কিন্তু চটকনা খাবেন ইন্টারভিউ গিয়ে। ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কেমন হওয়া উচিত?
ইন্টারভিউ এর সময় যে ইন্টারভিউ নিচ্ছে তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বুঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তার সাথে ভাব ভঙ্গি ইফেক্টিভলি হচ্ছে কিনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
সে কি আপনার উত্তর বুঝতে পারতেছে নাকি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, eye কন্ট্রাক্ট সব সময় রাখবেন। আবার এক টানা তাকায় থাকবেন না। নরমাল ভাবে চেয়ারে বসবেন।
ঝুঁকে বা ঠেস দিয়ে বসবেন না। তার কথা আপনি মনোযোগ দিয়ে শুনতেছেন সেটা বুঝানোর জন্য মাঝেমধ্যে মাথা ঝাঁকাবেন, হালকা একটু হাসিও মাঝেমধ্যে দিতে পারেন।
আর হাত পকেটের মধ্যে বা মুষ্টিবদ্ধ করে কখনোই রাখবেন না। চেয়ারের হাতলে বা টেবিলের উপরে ছেড়ে দিয়ে রাখবেন। হাতে কলম থাকলে নড়াচড়া করবেন না।
আসলে সর্বশেষ যে বিষয়টা বলতে চাই সেটা হল উপরের বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যদি নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন। তাহলে আপনার চাকরির ইন্টারভিউ অনেক ভাল হবে।