গার্মেন্টসে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ক্যারিয়ার?

টেক্সটাইল ক্যারিয়ার
টেক্সটাইল ক্যারিয়ার

গার্মেন্টস সেক্টর হল বাংলাদেশের বেসরকারী খাতের সবচেয়ে বড় চাকুরীর বাজার। তাই গার্মেন্টস সেক্টরে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা কি ধরনের চাকরি করতে পারবে তা নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

ক্যারিয়ার হিসাবে মার্চেন্ডাইজিং এর চাকরি কি?

গার্মেন্টস সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্ষেত্রটির নাম হলো মার্চেন্ডাইজিং এর চাকরি। ক্যারিয়ার হিসাবে মার্চেন্ডাইজিংকে মান মর্যাদা, দায়িত্বশীলতা ও তারাতাড়ি প্রমোশনের জন্য গার্মেন্টস সেক্টরের প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একজন মার্চেন্ডাইজার সাধারণত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির/ liaison Office/ বায়িং হাউজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করে থাকে। 

তাকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রায় সকল ডিপার্টমেন্টের সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হয়। আর Product Development থেকে শুরু করে sampling, costing, planning, communication, coordination এবং sourcing-এর কাজগুলো ধাপে ধাপে ও Parallel এ করতে হয়। এক কথায় বলতে গেলে, একটি অর্ডারকে বাস্তবায়নে যা যা করণীয় তা একজন মার্চেন্ডাইজারই সহজে সম্পাদন করে থাকে।

ক্যারিয়ারের প্রাথমিক অবস্থায় একজন মার্চেন্ডাইজার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে Management Trainee অথবা Intern হিসেবে কাজ শুরু করে। সেক্ষেত্রে একজন Management Trainee-র প্রারম্ভিক বেতন (১২-১৫) হাজার টাকা হয়ে থেকে। এবং ২-৩ বছর পর অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের liaison office এ উচ্চবেতনে চাকরী করতে পারে। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার পরিধি বৃদ্ধির সাথে সাথে বেতন ও অতি দ্রুত বেড়ে যায়। 

একজন মার্চেন্ডাইজারকে অবশ্যই স্নাতক/ স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হতে হয়। BGMEA Institute of Fashion Technology, Shanto-Mariam University of Creative Technology (SMUCT) ও NIFT,  সহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান মার্চেন্ডাইজিং এর উপর স্নাতক/ স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পাশাপাশি বিভিন্ন মেয়াদী diploma courses এর ব্যবস্থা করে থাকে। 

সাধারন স্নাতক ডিগ্রীর পাশা-পাশি এসব প্রতিষ্ঠান থেকে একটি ডিপ্লোমা করে থাকলে একটা ভালো চাকরি পাওয়া খুব সহজ হয়ে যায়।
      

কোয়ালিটি কন্ট্রোলার (Quality Controller) কি?

গার্মেন্টস শিল্পে Quality controller কে সংক্ষেপে QC বলা হয়। বাংলাদেশের ফ্যাক্টরিগুলো সাধারণত বায়িং হাউস এবং liaison office গুলো থেকে অর্ডার পেয়ে থাকে (কিছু ফ্যাক্টরি অবশ্য সরাসরি ক্রেতার কাছ থেকে অর্ডার পেয়ে থাকে) তবে তার সংখ্যা খুব সীমিত। একজন Quality Controller বা QC মার্চেন্ডাইজারের কাছ থেকে পোশাকের নির্দিষ্ট মান গুলো সঠিকভাবে বুঝে নেয়। 

উক্ত অর্ডারের নির্দিষ্ট মানদণ্ড যেমনঃ পোশাকের ডিজাইন, আকার, Quality ও আনুষঙ্গিক জিনিস মেটানোর জন্য তারা শ্রমিকের কাজ পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রন করে থাকে। কোয়ালিটি কন্টোলার মূলত পোশাকের গুণগত মান বজায় রেখে ফ্যাক্টরি শ্রমিক দ্বারা পোষাক তৈরির কাজগুলো সম্পাদন করে। প্রাথমিক অবস্থায় একজন সদ্য স্নাতক/ স্নাতকোত্তর ইন্টার্ন, Management trainee অথবা Junior Assistant of QC হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করে থাকে। 

ক্যারিয়ারের শুরুতে একজন কোয়ালিটি কন্টোলারের বেতন কাঠামো (১২-১৫) হাজার হয়ে থাকে। এবং ৬-৭ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে প্রায় (৯০,০০০-১,২০,০০০) টাকা আয় করতে পারে। এ পেশায় কাজ করতে হলে একজন কর্মীকে দৃঢ় ও দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।

স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দিয়ে একজন ব্যাক্তি QC তে ক্যারিয়ার গড়তে পারে। তবে কোন কোন প্রতিষ্ঠান উক্ত পদের জন্যে কিছু বিশেষ বিষয়ে ডিগ্রীধারীদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে। যেমনঃ রসায়নে স্নাতক, টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং এ স্নাতক ইত্যাদি।   

ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার ( Industrial Engineer) কি?

পোষাক উৎপাদনের জন্য গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে অত্যাধুনিক মেশিন ব্যবহৃত হয়। এসব মেশিনের নিয়ন্ত্রণ, কার্যকারিতা রক্ষা ও পর্যবেক্ষণের কাজগুলো দক্ষ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা সম্পাদিত হয়। সাধারণত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির উৎপাদন শক্তি ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়াররা দক্ষতার সাথে তাদের প্রকৌশলী জ্ঞান প্রয়োগ করেন।

একজন সদ্য Industrial & Production Engineer (IPE) সরাসরি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রথম অবস্থায় একজন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারের প্রারম্ভিক বেতন ৩০-৪০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। এবং অভিজ্ঞতার পরিধি বৃদ্ধির সাথে সাথে বেতন কাঠামোও আর বৃদ্ধি পায়। অনেক ক্ষেত্রে এরা ফ্যাক্টরির কনসালটেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারেন।

Industrial Engineer হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার জন্যে Industry & Production Engineering (IPE)-এর ডিগ্রী থাকা আবশ্যক। কিছু সুখ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমনঃ BUET, KUET, RUET, CUET, SUST, Bangladesh Textile University এবং আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি (AUST) এ ধরনের ডিগ্রি প্রদান করে থাকে।
  

ফ্যাশন ডিজাইনার (Fashion Designer) কি?

সাধারণত আমাদের দেশের ফ্যাশন ডিজাইনাররা প্রত্যক্ষভাবে পোষাক ডিজাইনের সাথে জড়িত নয়। সেক্ষেত্রে তারা ইতালী, স্পেন ও আমেরিকার ডিজাইনারদের সাথে কাজ করে থাকে। তবে তারা অনেক সময় EUROPE ও USA এর চাহিদা বুঝে পোষাক ডিজাইন করে থাকে, কিন্তু তা স্বল্প পরিসরের। 

দেশীয় ডিজাইনাররা সাধারণত liaison office, বায়িং হাউসে অথবা ফ্যাক্টরিতে কাজ করে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় তাদের বেতন (১০-১৫) হাজার টাকা হয়ে থাকলেও সৃজনশীল কাজ ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী তা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক liaison office এ যেসকল ডিজাইনাররা কাজ করে থাকেন, তাদের বেতন প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। তবে সেক্ষত্রে কর্মীর অভিজ্ঞতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

এক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে হলে একজন ব্যক্তিকে যে কোন বিষয়ে স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পর NIFT/ BGMEA কর্তৃক ফ্যাশন ডিজাইনিং এর উপরে স্বল্প মেয়াদী ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়াও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ও ফ্যাশন ডিজাইনিং-এর উপর স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করে থাকে।    

Commercial ডিপার্টমেন্ট কি?

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প হলো একটি রপ্তানিমুখী শিল্প। একজন Commercial Manager তৈরি পোষাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন। যেমনঃ শুল্ক বিভাগের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন, নথিকরণ, LC ও বিভিন্ন ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ ইত্যাদি। 

সেক্ষেত্রে অর্জিত অভিজ্ঞতা দিয়ে একজন Commercial Executive প্রায় (২৫-৩০) হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। যেকোন বিষয়ে ডিগ্রিধারীরা এ পদে কাজ করতে পারে। কিন্তু বিশেষভাবে Accounting, Finance এর উপর ডিগ্রি অর্জনকারীদের অগ্রাধিকার বেশি দেয়া হয়।

কমপ্লায়েন্স (Compliance) ডিপার্টমেন্ট কি?

গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির কর্মপরিবেশ, শ্রমিক নিরাপত্তা ও অনুকূল পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখার পরই বিদেশী ক্রেতারা ফ্যাক্টরির সাথে লেনদেনে সম্মত হয়। এক্ষেত্রে ফ্যাক্টরিগুলোকে সরকার কর্তৃক আরোপিত এবং ক্রেতাদের নির্দেশিত কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম নীতি ও আইন মেনে চলতে হয়।

একজন Compliance Manager এর কাজ হল ক্রেতার ও সরকারের নির্দেশনাগুলো (building code) শ্রমিক নিরাপত্তা, শ্রমিক বেতন ও কর্মপরিবেশ) ফ্যাক্টরিতে সঠিকভাবে পালন হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষন এবং তার উপর রিপোর্ট প্রদান করা।

অন্যান্য কর্মীদের মতই প্রাথমিক অবস্থায় তাদের বেতন (১২-১৫) হাজার টাকা হয়ে থাকে, কিন্তু অভিজ্ঞতা অর্জনের সাথে সাথে তা ৩-৪ গুণ বৃদ্ধি পায়।
      

Purchase & Procurement ডিপার্টমেন্ট কি?

একজন Purchase & Procurement Manager অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিতে যেসকল কাজগুলো করে থাকে সাধারণত গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় একই কাজ করে থাকে। পোশাক তৈরি করার জন্য অনেক ধরণের উপকরণ দরকার হয়। একজন Purchase & Procurement Manager এর কাজ হল দরকারি উপকরণগুলো বিভিন্ন উৎস থেকে ক্রয় ও মজুদ করে ফ্যাক্টরির উৎপাদন কাজ সচল রাখা। 

সাধারণত ৩-৪ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন Procurement ম্যানেজারের বেতন ৪০-৫০ হাজার হয়ে থাকে। যেকোন বিষয়ে ডিগ্রিধারীরা এ পদে কাজ করতে পারে। কিন্তু বিশেষভাবে Accounting, Finance এর উপর ডিগ্রি অর্জনকারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়ে থাকে।

তাছাড়া বিভিন্ন RMG (Readymade Garments) সেক্টর বলতে যে শুধুমাত্র উল্লেখিত ক্ষেত্রেই ক্যারিয়ার গড়া যাবে তা নয়। এটি একটি বিশাল ক্ষেত্র এবং সে অনুসারে এক্ষেত্রে কাজ করার বিশাল পরিসরে সুযোগ রয়েছে যেমনঃ
  • Production Officer
  • Executive
  • Fire Safety Officer
  • Accounts Officer
  • Environmental Engineer
  • Shipment Officer
  • Management Data Analyst
  • CAD
  • Supply Chain
  • Maintenance ইত্যাদি RMG সেক্টরের আওতাভুক্ত। 
যেকেউ এসকল পেশায় ন্যুনতম যোগ্যতা (স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রি) অর্জনের মাধ্যমে কাজ করার সুযোগ পেতে পারেন। একাউন্টিং, ফিন্যান্স, এইচ.আর.এম সহ বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারিরাও ক্ষেত্র অনুযায়ী গার্মেন্টস সেক্টরে নিজ ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

পরিশেষে বলা যায় টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস সেক্টরে টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারদের ভুমিকা অপরিসীম।
Textile BD

Founder and Editor of Textile BD. He is a Textile Blogger & Entrepreneur. He is working as a textile job in Bangladeshi companies.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন