কি কি গুন থাকলে তাকে টেক্সটাইল ফাইবার বলা হয়?

টেক্সটাইল ফাইবার
টেক্সটাইল ফাইবার

ফাইবার কি?
ফাইবারকে উদ্ভিদ বা প্রানীর বা অন্যান্য পদার্থের টিস্যুগুলোর একটি সুক্ষ্ম চুলের অংশ হিসেবে সংঙ্গায়িত করা হয়। যার দৈর্ঘ্য অবশ্যই ব্যাস থেকে কয়েক হাজার (সাধারণত ৫০০/৭০০-৫০০০ গুন বেশি হতে হবে।

টেক্সটাইল ফাইবার কি?
যে সকল ফাইবারের মধ্যে নূন্যতম দৈর্ঘ্য, শক্তি, সূক্ষ্মতা, স্থিতিস্থাপকতা, নমনীয়তা, প্রসারণ, রেসিলিয়েন্সি, বিশোষণ, ঊজ্জলতা, ড্রেপাবিলিটি সর্বপরি সুতা তৈরির গুণাবলি বিদ্যমান থাকে তাকে টেক্সটাইল ফাইবার বলে।

টেক্সটাইল ফাইবার হতে হলে একটি ফাইবারের যে সকল গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক তা হলঃ

(১) আশেঁর দৈর্ঘ্য (fiber length)
(২)আঁশের শক্তি(fiber strength)
(৩) আশের সুক্ষ্মতা (fiber fineness)
(৪) স্থিতিস্থাপকতা (elasticity)
(৫) প্রসারণ (elongation)
(৬) রেসিলিয়েন্সি (resiliency)
(৭) নমনীয়তা (pliability or flexibility)
(৮) বিশোষণ (absorbency)
(৯) ঊজ্জলতা (lustre)
(১০) ড্রেপাবিলিটি (drapability)

(১) আঁশের দৈর্ঘ্য (fiber length) কি?

আঁশের গুণাগুণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসাবে আঁশের দৈর্ঘ্যকে বিবেচনা করা হয়। কারণ হল উন্নতমানের সুতা তৈরিতে বড় দৈর্ঘ্যের অপেক্ষাকৃত মসৃণ ও শক্ত আশেঁর প্রয়োজন। দৈর্ঘ্য অবশ্যই ব্যাস থেকে কয়েক হাজার সাধারণত (৫০০/৭০০-৫০০০) গুন বেশি হতে হবে।

(২)আঁশের শক্তি(fiber strength) কি?

আঁশের শক্তির উপর সুতা ও কাপড় উভয়ের মান নির্ভর করে। তাছাড়া কাপড়ের শক্তি পরিমাপ করা হয়  টেনসাইল স্ট্রেংথ দিয়ে। আর বহুল ব্যবহৃত একক পাউন্ড/বর্গ ইঞ্চি (P.S.I) কিছু ফাইবার সব অবস্থাতেই শক্তি গড়েই থাকে, তবে কিছু ফাইবারকে ভেজা অবস্থায় শক্তিহীন হতে দেখা যায়।

তবে কটন ফাইবার ভিজলে শক্তি বেড়ে যায়।তাই ময়শ্চারাইজেসন প্রক্রিয়ায় কটনের শক্তি স্থায়ীভাবে বাড়ানো সম্ভব। শক্তির বৈচিত্র প্রকট এক্রাইলিক ফাইবারে এখানে উল্লেখ্য জেফরান এক্রাইলিক মোড এক্রাইলিক থেকে বেশি শক্তিশালী। কারণ ভিসকসের শক্তি এর কম।


(৩) আশের সুক্ষ্মতা (fiber fineness) কি?

আঁশের সুক্ষ্মতা সুতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ হল সুতার মান ও ধরণ আঁশের সুক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। একক দৈর্ঘ্যের ওজন হিসেবে আঁশের সুক্ষতাকে ভালো মন্দ হিসেব করা হয়।

(৪) স্থিতিস্থাপকতা (elasticity) কি?

ফাইবারের প্রসারিত হওয়ার ক্ষমতা ও ফাইবারকে টান মুক্ত করতে পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসার প্রবণতা নিরুপণে স্থিতিস্থাপকতা ব্যবহার করা হয়। 

আর ফাইবারের এই বৈশিষ্ট্য পোশাককে অনেক আরামদায়ক করে। পোশাকের টেকসই ও গুন স্থিতিস্থাপকতা ওপর নির্ভরশীল।

(৫) প্রসারণ (elongation) কি?

প্রসারন হল  ফাইবারের প্রসারিত হওয়ার গুন। সুতা ও কাপড় তৈরির জন্য নূন্যতম ১৮% প্রসারণ ক্ষমতা থাকা আবশ্যক।


(৬) রেসিলিয়েন্সি (resiliency) কি?

রেসিলিয়েন্সি কাপড়ের আরামপ্রদ অনুভূতি এনে দেয়। মুলত কাপড় ভাঁজ পাক বা টানের ফলে বিকৃত হওয়ার পর পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসার ক্ষমতাকে রেসিলিয়েন্সি বলে।

ভাল রেসিলিয়েন্সির কাপড়ের সৌন্দর্য, স্থায়িত্ব বেশি থাকে। উল ও সিল্ক এর রেসিলিয়েন্সি কটন ও লিনেন এর চেয়ে বেশি।

(৭) নমনীয়তা (pliability or flexibility) কি?

আঁশ নমনীয় থাকার কারণে সহজে পাক দেওয়া যায়। যার ফলে পোশাক পরিধানে বিরক্তিকর অনুভূতির হয় না। পোশাক সহজে ভাঁজ করা যায় নমনীয়তা থাকার কারণে।

(৮) বিশোষণ (absorbency) কি?

ফাইবারের জলীয়বাষ্প গ্রহণ করার ক্ষমতাকে বিশোষণ বলে। বিশোষণ এর আদর্শ মান (৬৩/৬৫/৬৭)%। 

উলের ময়শ্চার ধারণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। ময়শ্চারে রিগেইন ১৬% এর মত। রাসায়নিক সংযুক্তি ও আণবিক বিন্যাস বিশোষণ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। কার্বক্সিলিক
(COOH), অ্যামাইনো (NH2) গ্রুপযুক্ত ফাইবারের অ্যাবজরবেন্সি বেশি।

(৯) ঊজ্জলতা (lustre) কি? 

কাপড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে আর ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলে ফাইবারের উজ্জ্বলতা বৈশিষ্ট্যের কোন বিকল্প নেই। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য স্পিনিং দ্রবণে পিগমেন্ট বা অস্বচ্ছ তৈল ব্যবহার করা হয়।

(১০) ড্রেপাবিলিটি (drapability) কি?

ব্যবহারকারীর শরীরে ঝুলে ও লেপ্টে থাকার প্রবণতাকে ড্রেপাবিলিটি বলে। প্রাকৃতিক প্রোটিন ফাইবারের মধ্যে উল ও সিল্কের ড্রেপিং বা ড্রেপাবিলিটি গুনটা অসাধারণ।

সুতরাং বলা যায় যে, ফাইবারের মধ্যে উপরিউক্ত সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান না থাকলে সেই সকল ফাইবারে টেক্সটাইল ফাইবার বলা যায় না।

এজন্যেই বলা হয়, সকল টেক্সটাইল ফাইবার, ফাইবার কিন্তু সকল ফাইবার টেক্সটাইল ফাইবার নয়।

একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

মানুষের চুল একটি প্রোটিন ফাইবার কিন্তু এটি টেক্সটাইল ফাইবার নয়। কারণ হল যদিও চুলের কিছু শক্তি, দৈর্ঘ্য, সুক্ষতা ও টেক্সটাইল ফাইবারের অন্যান্য গুণাবলী আছে তথাপি এটাকে টেক্সটাইল ফাইবার বলা যায় না। 

কারণ হল এটার বহিরাবরণ বেশি গোলাকার, এটার কোন মুক্ত প্রজেক্টিং প্রান্ত নেই এবং এর পাক ধারণ ক্ষমতা নেই। মানুষের চুল গভীরভাবে পিগমেন্টেড যা টেক্সটাইলে ব্যবহার করার জন্য খুব অনুপযোগী।

তাই বলা যায় যে, সকল টেক্সটাইল ফাইবার, ফাইবার কিন্তু সকল ফাইবার টেক্সটাইল ফাইবার নয়।
Textile BD

Founder and Editor of Textile BD. He is a Textile Blogger & Entrepreneur. He is working as a textile job in Bangladeshi companies.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন