টেক্সটাইল ফাইবার পরিচিতি?

টেক্সটাইল ফাইবার

বিশ্ব বাজারে টেক্সটাইল শিল্পের গুরুত্ব অপরিহার্য।বস্ত্র ও পোশাক আমাদের অর্থনৈতিক চাকাকে দিন দিন সচল রেখে চলেছে।টেক্সটাইল শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হল ফাইবার বা আঁশ।এই পোস্টে থাকছে টেক্সটাইল ফাইবার পরিচিতি।

ফাইবার কাকে বলে? 
পোশাক শিল্পের কাপড় তৈরিতে যে সুতা বা তন্তু ব্যবহার করা হয়, তার ক্ষুদ্র অংশকে ফাইবার বলে।কাপড় তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় সুতার।আর ফাইবার ছাড়া সুতা তৈরি সম্ভব না।

টেক্সটাইল ফাইবার কি?
সুতা তৈরির উপাদান হিসাবে যেসব তুন্তু বা আঁশ ব্যবহার করা হয় তাকে টেক্সটাইল ফাইবার বলে। 

টেক্সটাইল ফাইবারের বিশেষ গুণাবলিগুলো কি কি?
টেক্সটাইল ফাইবারের বিশেষ কিছু গুণাবলি হল যেমনঃ পাকানোর জন্য ন্যূনতম দৈর্ঘ্য, শক্তি, নমনীয়তা, সমতা, আদ্রতা ধারণ ক্ষমতা ইত্যাদি অন্যতম।
তবে একটা বিষয় লক্ষনীয় যে একই ফাইবারে সব গুণাবলী থাকে না। 

বর্তমানে উন্নততর পদ্ধতিতে ফাইবারকে স্পিনিং ছাড়াই পাশাপাশি সাজিয়ে কিংবা রাসায়নিক বা তাপীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে টেক্সটাইল সামগ্রী তৈরী করা হচ্ছে। সেই কারণেই একই ফাইবারের সকল গুণাবলীও সর্বক্ষেত্রে অপরিহার্য নয় বলে বিবেচিত হয়।

টেক্সটাইল ফাইবার কত প্রকার ও কি কি?
টেক্সটাইল ফাইবার ২ প্রকার যথাঃ 
১.প্রাকৃতিক ফাইবার
২.কৃত্রিম ফাইবার

১.প্রাকৃতিক ফাইবার কাকে বলে?
প্রকৃতিতে জন্মে এমন সব গাছ, ফুল, প্রাণী, খনি ইত্যাদি থেকে যে ফাইবার আহরণ করা হয় তাকে প্রাকৃতিক ফাইবার বলা হয়। 

প্রাকৃতিক ফাইবারের প্রকারভেদ? 
প্রাকৃতিক ফাইবার এর মধ্যেও বিভিন্ন শ্রেণীভেদ আছে।যেমনঃ উদ্ভিজ্জ, প্রাণীজ ও খনিজ।

কয়েকটি প্রাকৃতিক প্রোটিন ফাইবার নিচে দেওয়া হল যেমনঃ
মোহেয়ার,কাশ্মীরি,আলপাকা,ভিকুনা, লামা,ইত্যাদি।

২.কৃত্রিম ফাইবার কাকে বলে?
বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রনে বিক্রিয়া ঘটিয়ে বা বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক পদার্থের পলিমারাইজেশন ঘটিয়ে যে কৃত্রিম আঁশ তথা ফিলামেন্ট তৈরি করা হয় তাকে রাসায়নিক ফাইবার বলে।

কয়েকটি কৃত্রিম ফাইবারের নাম যেমনঃ নাইলন, পলিষ্টার, রেয়ন, ভিসকস, আক্রাইলিক ফাইবার ইত্যাদি।

কৃত্রিম ফাইবার কবে পরীক্ষামূলকভাবে আবিষ্কার করা হয়? 
কৃত্রিম ফাইবার পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথম আবিস্কৃত হয় ১৮৫৭ সালে।

কটন ফাইবার কাকে বলে?
যে ফাইবার সেলুলোজ নামক পদার্থ থেকে তৈরি হয় তাকে কটন ফাইবার বলে।

কটন ফাইবারের ধারণা? 
সকল ফাইবারের রাজা বলা হয় কটন ফাইবারকে। কটন শব্দের উৎপত্তি হয় আরবি ভাষা কুতুম শব্দ থেকে।কটন একটি ইউনিসেলুলার ফাইবার।কটন ফাইবারের মুল উপাদান হল সেলুলোজ।আর কটনে সেলুলোজ থাকে শতকরা ৯৪ থেকে ৯৭ ভাগ।কটন ফাইবারের দৈর্ঘ্য সাধারণত ১২.৭ থেকে ৬০ মিলিমিটার পর্যন্ত। 

কটনকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় যেমনঃ 
  • সি আইল্যান্ড
  • ইজিপ্সিয়ান
  • সাউথ আমেরিকান
  • আমেরিকান আপল্যান্ড
  • ইন্ডিয়ান
  • চায়না
তবে বর্তমান বিশ্বে কটন ফাইবার থেকে তৈরি বস্ত্র সামগ্রীর চাহিদা প্রায় ৬৫ শতাংশ। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কটন হল ইজিপ্সিয়ান কটন।

সিল্ক ফাইবার কাকে বলে?
সিল্ক ফাইবারকে ফাইবারের রাণী বলা হয়।সিল্ক ফাইবার বা রেশম তন্তু বা সুতা, রেশম মথ নামে এক ধরনের মথের লার্ভার লালাগ্রন্থি বা রেশ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রসের তৈরি হয় বলে একে সিল্ক ফাইবার বলা হয়। 

সিল্ক ফাইবারের ধারণা?
আর জানি যে, সিল্ক ফাইবারকে সকল ফাইবারের রাণী বলা হয়।এরা আ্রথোপোডা (Arthropoda) পর্বের অন্তর্ভুক্ত ইনসেক্টা (Insecta) শ্রেণীর লেপিডটেরা (Lepidoptera) বর্গের পতঙ্গ। রেশম পোকার ইংরেজি নাম হল সিল্ক ওর্য়াম (Silk Worm)। ওর্য়াম (Worm) শব্দের অর্থ কীট। Silk Worm এর অর্থ দাঁড়ায় রেশম কীট। কৃমি জাতীয় প্রাণীদের কীট বলা হয়। 

আসলে এরা দেখতে কৃমির মত নয়। তবে এরা পূর্ণবয়স্ক হলে প্রজাপতির মত দেখায়। তাই কীট না বলে পোকা বলাই বরং ভাল হয়। 
বিভিন্ন প্রজাতির রেশম মথ বিভিন্ন মানের রেশম সুতা তৈরি করে। আমাদের দেশে যে রেশম পোকা পাওয়া যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম বোমবিক্র মোরি (Bombyx mori)। চীন দেশে সর্বপ্রথম রেশম সুতা আবিষ্কৃত হয়। 

প্রাচীনকালে বাংলাদেশে উৎকৃষ্টতার বিচারে রেশম কাপড়কে ৩টি শ্রেণিতে ভাগ করা হতো। 

এই ভাগ তিনটি হলো যথাঃ
গরদ
তসর
মটকা

ফ্লাক্স ফাইবার কাকে বলে?
লিনেন বস্ত্র থেকে উৎপাদন হয় বলে একে ফ্লাক্স ফাইবার বলে।

ফ্লাক্স ফাইবারের ধারণা?
লিনেন বস্ত্র উৎপাদন হয় ফ্লাক্স ফাইবার থেকে।আর ফ্লাক্স ফাইবারের উৎপওি হচ্ছে তিসি বা মসিনা গাছ(Flax) থেকে। আর এর উজ্জ্বলতা রেশমের মতো নয়,তবে তুলার তুলনায় উজ্জ্বল হয়।

এটি কটন ফাইবার অপেক্ষা দুই থেকে তিন গুন বেশি শক্তিশালী, ভেজালে এর শক্তি আরো বৃদ্ধি পায়।পানির শোষন ক্ষমতাও তুলার চেয়ে ভালো।তাই সহজে ভাঁজ পড়ে না।

ফ্লাক্স ফাইবার দিয়ে সূক্ষ্ম সুতা বা মসৃন লিনেন বস্ত্র তৈরি করা যায়,যা বেশ চকচকে,মজভুত ঠান্ডা হয়।এধরণের কাপড় পরিধানে খুুব আরাম বোধ হয়।এই তন্তু সমতল ভাবে অবস্থান করে এবং সুন্দরভাবে ঝুলে থাকে। তাই টেবিল কভার, বিছানার চাদর, রুমাল, পর্দা, পরিধেয় ও গৃহস্থালী বস্ত্র হিসেবে অনেক জনপ্রিয়। পানি শোষন ক্ষমতা অনেক বেশি থাকায় লিনেন বস্ত্র গরমের দিনের পোশাকের জন্য বেশ আরামদায়ক ও জনপ্রিয়। 

উল ফাইবার কাকে বলে?
বিভিন্ন প্রাণীর দেহের লোম থেকে এই ফাইবার পাওয়া যায় বলে একে উল ফাইবার বলে।

উল ফাইবারের ধারণা? 
পশম হল একটি প্রাণিজ ফাইবার।বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে ভেড়ার লোমই পশমি বস্ত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।উল ফাইবার পানির শোষণক্ষম সবচেয়ে ভালো হয়ে থাকে।পশম তন্তু বেশ নমনীয় ও স্থিতিস্থাপক হয়।আর এজন্য সহজে ভাঁজ পড়ে না।

পশম তাপ সুপরিবাহী নয়।তাই সোয়েটার, মোজা,মাফলার, কোট,জ্যাকেট ইত্যাদি পশমি বস্ত্র শীতবস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।এছাড়াও পশম দিয়ে নানা ধরনের কম্বল,শাল,কার্পেট তৈরি করা হয়ে থাকে। ভিজলে পশমি বস্ত্রের আকৃতি ও শক্তি কিছুটা কম হয়।তাই ধোয়া বা ইস্ত্রি করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, টেক্সটাইল ফাইবার টেক্সটাইল শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল।
Next Post Previous Post