টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং |
বাংলাদেশে টেক্সটাইল শিক্ষার প্রসারঃ
(১) কেন এত গুরুত্বপূর্ণ টেক্সটাইল শিল্পের?
বর্তমান বিশ্বে জনপ্রিয় শিল্প গুলোর মধ্যে অন্যতম শিল্প হচ্ছে টেক্সটাইল শিল্প । বর্তমান প্রযুক্তির এই যুগে যে কয়টি পেশার সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে টেক্সটাইল শিল্প হল অন্যতম।চাহিদার তুলনায় এই পেশায় দক্ষতা সম্পন্ন লোকের সংখ্যা অনেক কম।বাংলাদেশে টেক্সটাইল শিল্পটি অতি দ্রুত গতিতে দিনদিন বিকশিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই টেক্সটাইল শিল্পের উন্নতির চরম শিখরে পৌছেঁ গেছে।ফলে এই শিল্পে দক্ষতা সম্পন্ন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা ব্যাপক হারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(২) চাকুরি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা
বর্তমান সময়ে টেক্সটাইল শিল্পে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা অনেক বেশি।তাই অনেকের ক্ষেত্রেই ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী অর্জন করার আগেই চাকুরী হয়ে যায়।
(৩) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হলে শিক্ষার্থীদেরকে ৬০% মার্কস সহ দ্বাদশ শ্রেণীতে পাস করতে হবে।তাছাড়া ভর্তি পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হতে হবে। এছাড়াও অনেক সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোতে আপনি ভর্তি হতে পারবেন।(৪) কেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বেন?
ইঞ্জিনিয়ার একটি ইংরেজি শব্দ যার অর্থ প্রকৌশলী। ইঞ্জিনিয়ারিং মানে হচ্ছে প্রকৌশলের মাধ্যমে কোন কাজ সুসম্পন্ন করাকে বুঝায়। বিশ্বায়নের এই যুগে শিল্প ইন্ডাস্ট্রির সংখ্যা ক্রমশই দ্রুত গতিতে বাড়ছে। আর এ কারণেই বাড়ছে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার গুরুত্ব। নিশ্চিত কর্মসংস্থানের একমাত্র এবং পরীক্ষিত মাধ্যম হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা। সারা বিশ্বে জেনারেল শিক্ষার চেয়ে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষা বেশি জনপ্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই প্রকৌশল জ্ঞান কাজে লাগিয়ে অতি সহজ ভাবে, কম সময়ে, কম খরচে, কম জনশক্তিতে করা যায়।
(৫) টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারদের বেতন সীমা
বর্তমান সময়ে গার্মেন্টস বা টেক্সটাইল শিল্পে ইঞ্জিনিয়ারদের চাকুরীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একটি ক্রমবর্ধমান শিল্প হিসেবে যে কোন শিক্ষার্থী এই সাবজেক্টটি বেছে নিতে পারেন। অধ্যয়নরত যে কোন শিক্ষার্থীও যে কোন প্রতিষ্ঠানে ৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকুরী করতে পারেন।
তাছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী অর্জনের পর কর্মজীবনে প্রবেশের ৫/৬ বছর পরই একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের বেতন আনুমানিক ৫০ হাজার অথবা ৯০ হাজারে রূপান্তরিত হতে পারে। সাথে সাথে অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
(৬) কোথায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংপড়বেন
আপনি যদি একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হতে চান।তবে আপনাকে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং পড়তে হবে অথবা কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করতে হবে।বাংলাদেশের বহু সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ রয়েছে।বর্তমানে বাংলাদেশে ৪ টি পাবলিক টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ও ৩৫টি ডিপ্লোমা পর্যায়ের প্রাইভেট ইন্সটিটিউট ও ৬টি পাবলিক পর্যায়ের ইন্সটিটিউট রয়েছে।
সেই সব প্রতিষ্ঠানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে থাকে। তাছাড়া বহু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও এই বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে থাকে।
(৭) বাংলাদেশের টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং কলেজ, ইন্সটিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা?
ইনস্টিটিউটঃ
- দিনাজপুর টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, পুলহাট, দিনাজপুর।
- টাঙ্গাইল টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, বাজিতপুর, টাঙ্গাইল।
- বরিশাল টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, গৌরনদী,বরিশাল।
- নাটোর টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, নাটোর।
- চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট,চট্টগ্রাম।
- রংপুর টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, রংপুর।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
- বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়
- ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর
- খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা
- মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল
টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং কলেজঃ
- চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, চট্টগ্রাম।
- বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, নোয়াখালী।
- পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পাবনা।
- শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বরিশাল।
- ঝিনাইদহ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ,ঝিনাইদহ।
- (সাবেক বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব টেক্সটাইল টেকনোলজি) বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, কালিহাতী টাঙ্গাইল(বর্তমান নাম)
বেসরকারি টেক্সটাইল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ
- বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এ্যান্ড টেকনোলজি।
- ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
- শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি।
- বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি।
- সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি।
- আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
- সিটি ইউনিভার্সিটি।
- সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি।
- প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি।
- নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি।
- বাংলাদেশগ্রীন ইউনিভার্সিটি।
- আইডিয়াল টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট।
(৮) কোথায় চাকুরী করবেন?
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করার পর কেউ বেকার রয়েছে এমন নজির নেই।তবে দুই এক জনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে।টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী অর্জনের পর আপনি সরকারী চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি টেক্সটাইল ইন্ড্রাস্টির পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন গার্মেন্টস ও বায়িং হাউজে উচ্চ বেতনে চাকুরী পেতে পারেন।
তাছাড়াও বেসরকারী পর্যার্য় স্থাপিত দেশী বিদেশী বিভিন্ন টেক্সটাইল মিল, ফ্যাশন হাউজ, বুটিক হাউজ ইত্যাদিতেও চাকুরীর সুযোগ রয়েছে। আবার বিভিন্ন কম্পোজিট শিল্প,যেমনঃ নিটিং, স্পিনিং ও উইভিং শিল্পেও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করতে পারেন।
তাছাড়া আমাদের দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, বিমা, ডাকবিভাগ, ও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান, ব্র্যাক, আশা, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, শিল্প ঋণ বিতরন সংশ্লিষ্ট পদে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারা চাকরির করে থাকে।
বলা যায় শুধুমাত্র দেশের ভিতরেই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য বিশাল কাজের সুযোগ রয়েছে। পরিশেষে বলা যায় যে, টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি।